মুদারাবা ও মুশারাকার পার্থক্য
ব্যবসা পরিচালনা এবং লাভ-লোকসান বন্টনের ক্ষেত্রে মুদারাবা ও মুশারাকার বেশ পার্থক্য রয়েছে। জানুন মুদারাবা ও মুশারাকার পার্থক্যসমূহ।
মুদারাবা এবং মুশারাকা উভয়ই ইসলামী অর্থ ব্যবস্থায় অংশীদারী ব্যবসার চুক্তি। তবে বিনিয়োগের ধরণ, ব্যবসা পরিচালনা এবং লাভ লোকসান বন্টনের ক্ষেত্রে মুদারাবা ও মুশারাকার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভিন্নতা রয়েছে।
এই ব্লগে মূলত আমরা মুদারাবা ও মুশারাকার মধ্যে পার্থক্য বুঝার চেষ্টা করবো। এগুলোর পার্থক্য বুঝার আগে আমাদের বুঝতে হবে আসলে মুদারাবা ও মুশারাকা কি।
মুদারাবা কাকে বলে
মুদারাবা হল একটি অংশীদারী ব্যবসার চুক্তি যেখানে একজন মূলধন বিনিয়োগ করেন এবং অন্যজন শ্রম ও মেধা দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করেন। মূলধন বিনিয়োগকারীকে “সাহিব আল মাল” এবং শ্রম ও মেধা বিনিয়োগকারীকে “মুদারিব” বলা হয়। ব্যবসায়ে মুনাফা হলে উভয়ে নির্দিষ্ট হারে ভাগ করে নিবেন কিন্তু লোকসানের জন্য মূলধন বিনিয়োগকারী সম্পূর্ণ দায়ী থাকেন।
অর্থাৎ, মুদারাবা পদ্ধতিতে ২টি পক্ষ থাকে, একপক্ষ বিনিয়োগকারী যিনি শুধুমাত্র অর্থ বিনিয়োগ করবেন। অন্য পক্ষ তার মেধা ও শ্রম দিয়ে ব্যবসা পরিচালনার জন্য দায়ী থাকবেন।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তারা উভয়ে ব্যবসার লাভ বন্টন করবেন। ব্যবসার লোকসান হলে, অর্থ বিনিয়োগকারী আর্থিক লোকসান বহন করবে অন্যদিকে পরিচালক তার সময়, শ্রম ও মেধার লোকসান বহন করবে।
মুদারাবা চুক্তিটি একটি বহুল ব্যবহৃত ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক বিনিয়োগ পদ্ধতি। যেহেতু ব্যবসার লোকসানের জন্য শুধুমাত্র বিনিয়োগকারী দায়ী থাকে, এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ হতে পারে।
আরও পড়ুন:
মুশারাকা কাকে বলে
মুশারাকা হল ইসলামী অর্থ ব্যবস্থায় একটি অংশীদারী ব্যবসার চুক্তি যেখানে দুজন বা ততোধিক ব্যক্তি তাদের অর্থ ও শ্রম বিনিয়োগ করে একটি ব্যবসা পরিচালনা করে। ব্যবসায়ের লাভ-লোকসান অংশীদাররা তাদের মূলধন অনুপাতে ভাগ করে নেয়।
মুশারাকা আমাদের দেশের সাধারণ অংশীদারী ব্যবসার মত। এই চুক্তির শর্ত সহজ, তবে বড় আকারের ব্যবসা, দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসার ক্ষেত্রে এই ধরণের চুক্তি সম্পাদিত হয়।
মুশারাকা বহুল ব্যবহৃত বিনিয়োগ পদ্ধতি। এই পদ্ধতি দ্রুত ব্যবসার প্রসারের জন্য সহায়ক ও লাভজনক। লাভ-লোকসান সকল বিনিয়োগকারী ভাগ করে নেয় বলে এখানে মুদারাবা পদ্ধতির চেয়ে কিছুটা কম ঝুঁকিপূর্ণ।
মুদারাবা ও মুশারাকার পার্থক্য
মুদারাবা এবং মুশারাকার পার্থক্য হচ্ছে, মুদারাবা হল একতরফা অংশীদারিত্ব, যেখানে একজন বিনিয়োগকারী মূলধন সরবরাহ করে এবং অন্যজন পরিচালক শ্রম দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে। অপরদিকে, মুশারাকা হল দ্বিমুখী অংশীদারিত্ব, যেখানে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি তাদের অর্থ ও শ্রম বিনিয়োগ করে একসাথে ব্যবসা পরিচালনা করে।
বৈশিষ্ট্য | মুদারাবা | মুশারাকা |
---|---|---|
অংশীদারিত্বের ধরন | একতরফা | দ্বিমুখী |
মূলধন বিনিয়োগকারীর ভূমিকা | শুধুমাত্র মূলধন সরবরাহ করে। | মূলধন এবং শ্রম উভয় সরবরাহ করে। |
ব্যবসার ধরণ | মুদারাবা ছোট আকারের ক্ষুদ্র ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। | মুশারাকা বৃহদায়তন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য। |
মুনাফার ভাগ | মূলধন বিনিয়োগকারী মুনাফার একটি নির্দিষ্ট অংশ পান, যা প্রায় আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে। | সকল অংশীদার মুনাফার সমস্ত অংশ বিনিয়োগ অনুপাতে ভাগ করে নেয়, যা প্রায়শই আগে থেকেই নির্ধারিত হয় না। |
লোকসানের ভাগ | মূলধন বিনিয়োগকারী আর্থিক লোকসানের জন্য সম্পূর্ণ দায়ী থাকে। | সকল অংশীদার লোকসানের জন্য তাদের বিনিয়োগের অনুপাতে দায়ী থাকে। |
ঝূঁকি | শুধুমাত্র অর্থ বিনিয়োগকারী লোকসান বহন করে বলে এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ | লোকসান সকল অংশীদারদের মধ্যে মুলধন অনুপাতে বন্টন হয় বলে, মুশারাকায় ঝুঁকি তুলনামূলক কম। |
উদাহরণ | একজন ব্যবসায়ী একটি ব্যবসা শুরু করার জন্য একজন বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। | দু্ই বা তার অধিক ব্যক্তি একটি ব্যবসা শুরু করার জন্য তাদের অর্থ এবং শ্রম বিনিয়োগ করে। |
শেষকথা
উপরের আলোচনা থেকে, দেখলাম মুদারাবা ও মুশারাকা কি, এগুলোর মূল পার্থক্য। উভয় ধরণের অংশীদারী ব্যবসারই ক্ষেত্র, সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে। অংশীদারদের অবশ্যই চুক্তি সম্পর্কে ভালভাবে বুঝে শুনে তাদের অর্থ ও শ্রম বিনিয়োগ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
আরও পড়ুন:
লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া, বিনিয়োগ, অনলাইনে টাকা আয় সম্পর্কে বিভিন্ন আপডেট তথ্য পেতে, আমাদের ফেসবুক পেইজ ফলো করে রাখুন- MoneyAns। এছাড়া নিয়মিত ভিজিট করুন bn.moneyans.com।