ইসলামী ব্যাংক খামার লোন ২০২৪: লোন নেওয়ার পদ্ধতি ও কি কি লাগে
বেকার ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ইসলামী ব্যাংক দিচ্ছে সহজ শর্তে ব্যবসায়িক ঋণ। জানুন ইসলামী ব্যাংক খামার লোন নেওয়ার পদ্ধতি ও কি কি লাগবে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের স্বাবলম্বী করার জন্য বিভিন্ন ধরনের লোন দিয়ে থাকে যার মধ্যে ইসলামী ব্যাংক খামার লোন অন্যতম।
বর্তমানে Islami Bank বেকার, কৃষক, শ্রমিক, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জামানত ছাড়া বা জামানত সহ প্রায় ৩ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংক কৃষি লোন বা খামার লোন দিয়ে থাকে এবং স্বল্প লোন পরিশোধের হার সহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে।
আজকে আমরা ইসলামী ব্যাংক খামার লোন কি, খামার লোন নেয়ার পদ্ধতি, কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হয়, খামার লোনের সুবিধা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
ইসলামী ব্যাংক খামার লোন কি
ইসলামী ব্যাংক খামার লোন হচ্ছে বেকার যুবক-যুবতী, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তাদের জন্য একটি ক্ষুদ্র ঋণ সুবিধা।
ইসলামী ব্যাংকের Small business investment scheme (SBIS) থেকে বেকার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পশু পাখির খামার, মৎস্য চাষ, হাঁস-মুরগি পালন, বেকারি, ছোট রেস্তোরা, লন্ড্রি, মুদির দোকান, মিষ্টির দোকান, কনফেকশনারী, মেডিসিন, লাইব্রেরি, ইলেকট্রনিক্স এর দোকান, মাছ /মাংস /জুতা / কাপড় / শাকসবজি খুচরা বিক্রয় ইত্যাদির জন্য এই খামার লোন দিয়ে থাকে।
ইসলামী ব্যাংক খামার লোনের শর্তাবলী
ইসলামিক ব্যাংকে বিভিন্ন ধরনের লোন দেওয়ার জন্য কয়েকটি বিশেষ ইসলামিক পদ্ধতি অনুসরণ করে লোন দেওয়া হয় যেমন বাই-মুরাবাহা, বাই- মুয়াজ্জাল, বাই-ইসতিজরার, বাই-সালাম ইত্যাদি।
- বাই-মুরাবাহা / বাই-মুরাবাহা টিআর / বাই-মুয়াজ্জাল যা সর্বোচ্চ ১ বছর মেয়াদি, অথবা HPSM যা সর্বোচ্চ ৩ বছর মেয়াদি (গর্ভকালীন সময় ব্যতীত)
- খামার লোন নেয়ার ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি জামানত ছাড়া সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা এবং জামানত সহ সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন নিতে পারবে।
- ইসলামী ব্যাংক খামার লোনের ক্ষেত্রে ব্যাংকের বিনিয়োগের অনুপাত হবে ৮০:২০।
- জামানত ছাড়া লোন নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা পরিশোধ করতে না পারলে ব্যাংক থেকে লোন গ্রহণকারীর স্থাবর, সম্পত্তি, লিকুইড সিকিউরিটিজ, পিজি / ইনভের হাইপোথিকেশন ইত্যাদির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবে বা দখল করতে পারবে।
- বার্ষিক ৯℅ হারে ব্যাংকের লোন পরিশোধ করতে হবে।
- যদি কোন কারণে জামানত ছাড়া লোন গ্রহনকারী ব্যক্তি ব্যাংকের লোন পরিশোধ করতে না পারে এবং তার সম্পত্তি যদি ব্যাংক দখল করে নেয় তাহলে তা পুনরুদ্ধার করার জন্য অবশ্যই ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে।
লোন নেয়ার পূর্বে অবশ্যই ইসলামী ব্যাংকের উপরোক্ত শর্তগুলো ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। এছাড়াও লোন সম্পর্কে কোন তথ্য পরিষ্কারভাবে জানতে হলে ইসলামী ব্যাংকের নিকটস্থ শাখায় যেতে পারেন।
আরও পড়ুন:
ইসলামী ব্যাংকের খামার লোনসমূহ
ইসলামী ব্যাংকের নিম্মোক্ত ২টি খামার লোন স্কিম রয়েছে,
উপরের লিংক থেকে লোন গুলোর শর্ত ও ঋণ প্রদানের খাত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন।
কি কি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে
ইসলামী ব্যাংক খামার লোন নেয়ার জন্য আপনাকে ইসলামী ব্যাংকের নির্ধারিত কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন – জাতীয় পরিচয়পত্র, আবেদনকারীর ছবি, Bank Statement, Tin Certificate ইত্যাদি জমা দিতে হবে।
ইসলামী ব্যাংক খামার লোন নেওয়ার জন্য যে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে সেগুলো হলো –
- জাতীয় পরিচয়পত্র / বৈধ পাসপোর্ট / ড্রাইভিং লাইসেন্স এর কপি;
- আবেদনকারীর ২ কপি Passport Size রঙিন ছবি;
- ইসলামী ব্যাংক খামার লোনের আবেদন ফরম;
- TIN Certificate;
- কমপক্ষে ছয় মাসের Bank Statement;
- আবেদনকারীর ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট;
- সাম্প্রতিক Utility বিলের কপি যেমন বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল ইত্যাদি।
উপরোক্ত কাগজপত্র বা ডকুমেন্টগুলো ইসলামী ব্যাংক থেকে খামার লোন নেয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠান ভেদে অতিরিক্ত কাগজপত্র প্রয়োজন হলে তা জমা দিতে হবে।
ইসলামী ব্যাংক খামার লোন নেওয়ার উপায়
ইসলামী ব্যাংক খামার লোন নেওয়ার জন্য ইসলামী ব্যাংকের নিকটস্থ শাখায় যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে। তারপর আবেদন ফরম পূরণ করে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিন। ব্যাংক থেকে লোনের আবেদন অনুমোদন হলে আপনার একাউন্টে লোনের টাকা জমা করা হবে।
ইসলামী ব্যাংক থেকে খামার লোন নেওয়া খুব একটা জটিল ব্যাপার নয়, কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে খুব সহজেই লোন নেয়া সম্ভব।
চলুন ইসলামী ব্যাংক খামার লোন বা কৃষি লোন পদ্ধতি ধাপে ধাপে জেনে নেয়া যাক।
ধাপ ১: ইসলামী ব্যাংকের নিকটস্থ শাখায় যোগাযোগ করুন
ইসলামী ব্যাংক খামার লোন নেওয়ার জন্য প্রথমেই আপনাকে আপনার নিকটস্থ ইসলামী ব্যাংকের শাখায় যোগাযোগ করে ঋণের শর্ত ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কি লাগবে তা জেনে নিতে হবে।
ঋণ আবেদনের জন্য অবশ্যই প্রথমে শাখার ম্যানেজারের সাথে কথা বলতে হবে। আপনার ঋণ কেন প্রয়োজন, কত টাকা প্রয়োজন এসব জানার পর ম্যানেজার সস্মতি দিলে আপনি আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে।
তারপর ব্যাংকের শর্ত অনুযায়ী কাগজপত্র যোগাড় হলে ব্যাংকের শাখা থেকে অথবা অনলাইন থেকে খামার লোনের আবেদন ফরম সংগ্রহ করুন। সকল তথ্য সঠিকভাবে দিয়ে আবেদন ফরমটি পূরণ করুন। ফরম পূরণে কোন অসুবিধা হলে, দ্বায়িত্বরত অফিসার থেকে সহযোগিতা নিন।
ধাপ ২: প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করুন
আবেদন ফরম পূরণ করার পর তার সাথে অন্যান্য সকল কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হবে। ইসলামী ব্যাংক খামার লোনের জন্য উপরে বর্ণিত সকল ডকুমেন্টের ফটোকপি নিবেন।
ধাপ ৩: অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করুন
খামার লোনের আবেদন জমার পর, ব্যাংক আপনার ঋণ আবেদনটি প্রক্রিয়া শুরু করবে। আপনার সকল কাগজপত্র সঠিক ও নির্ভুল হলে এবং কোন রকম জটিলতা না থাকলে ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যেই আপনার ঋণ আবেদনটি অনুমোদন হতে পারে।
তাই এজন্য কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।
ধাপ ৪: ঋণের টাকা সংগ্রহ করুন
ব্যাংক থেকে লোনের অনুমোদন দেওয়ার পর আপনার ব্যাংক একাউন্টে তা জমা করা হবে। একাউন্টে টাকা জমা হলে অবশ্যই আপনি মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে জানতে পারবেন।
তারপর আপনার সুবিধা ও প্রয়োজন মত ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারবেন।
ইসলামী ব্যাংক খামার লোনের সুবিধা
ইসলামী ব্যাংক খামার লোনের রয়েছে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা যার মধ্যে বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কাজের সুযোগ বৃদ্ধি, ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করার সুযোগ, বেকারত্ব থেকে মুক্তি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশে এমন অনেক যুবক-যুবতী রয়েছে যারা বেকার, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাদের স্বাবলম্বী করার জন্য এবং কাজের সুযোগ বৃদ্ধি করার জন্যই মূলত ইসলামী ব্যাংকের small business investment scheme (SBIS) থেকে খামার লোন দেওয়া হয়।
ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে অনেক বেকার জনগোষ্ঠী নিজেরা ব্যবসা শুরু করে বা উদ্যোক্তা হয়ে স্বাবলম্বী হতে পারছে।
আবার অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক, জেলে ইত্যাদি ক্ষুদ্র পেশার মানুষজন ব্যাংক থেকে খামার লোন নিয়ে তাদের কাজে লাগাতে পারছে এবং ভালো অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হচ্ছে।
ইসলামী ব্যাংক থেকে খামার লোন নিয়ে তারা নিজেরা স্বাবলম্বী হতে পারছে এবং লোন পরিশোধে হার কম হওয়ায় উপার্জিত অর্ধ থেকে তারা ব্যাংকের লোন পরিশোধ করতে সক্ষম হচ্ছে।
ইসলামী ব্যাংকে জামানত ছাড়াও খামার লোন দেয়া হয় বলে অনেকেই আলাদা সুযোগ সুবিধা এবং শূন্য থেকে শুরু করে ভালো অর্থ উপার্জন করার পথ খুঁজে পাচ্ছে।
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের লোন দেওয়া বা খামার লোন দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক শরীয়ত সম্মত উপায় অবলম্বন করে যার ফলে উদ্যোক্তারা লোনের অর্থ পরিশোধ করতে বিশেষ সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে। (ইসলামী ব্যাংক ঋণ শরীয়তসম্মত হওয়ার বিষয় আমরা কোন মতমত বা নিশ্চয়তা দেই না)
ইসলামী ব্যাংকের খামার লোন প্রদানের এই উদ্যোগের ফলে বহু সংখ্যক বেকার এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা স্বাবলম্বী হতে পারছে এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও ভোগ করতে পারছে।
ইসলামী ব্যাংক খামার লোন নিয়ে প্রশ্ন-উত্তর
শেষ কথা
উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করে কোন জটিলতা ছাড়াই আপনি খুব সহজে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে ইসলামী ব্যাংক খামার লোন নিতে পারবেন।
ঋণ আবেদন করার জন্য বেশিরভাগ কাজেই আপনাকে ব্যাংকের অফিসাররা সহযোগিতা করবে। তাই আপনার খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই।
কত টাকা জামানত লাগবে তা উল্লেখ করা নেই তো
জামানত আসলে টাকা দিয়ে নয়, স্থাবর সম্পত্তি যেমন জমি বা বাড়ি, এফডি আর ইত্যাদি। ঋণের পরিমাণের চেয়ে অবশ্যই বেশি হতে হবে।