বাংলাদেশে বিনা জামানতে ঋণ দেয় কোন ব্যাংক ২০২৪
আলোচনা করা হলো বিনা জামানতে ঋণ দেয় কোন ব্যাংক, ঋণের পরিমাণ, শর্তাবলী ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কি কি লাগবে বিস্তারিত।
এখানে আলোচনা করবো বাংলাদেশে বিনা জামানতে কোন কোন ব্যাংকগুলো ঋণ প্রদান করে। এসব ঋণের শর্ত কি, কিভাবে ঋণের জন্য আবেদন করবেন ইত্যাদি।
বিনা জামানতে সবাইকেই ঋণ দেয়া হয় না। ব্যাংকগুলো তাদের কর্মসূচি অনুযায়ী বিশেষ ধরণের গ্রাহককেই এসব ঋণ প্রদান করে থাকে।
যেমন কর্মসংস্থান ব্যাংক শুধুমাত্র বেকার ও উদ্যোক্তাদের তাদের প্রকল্পের জন্য ঋণ দিয়ে থাকে। সোনালী ব্যাংক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের তাদের ব্যবসা প্রসারের জন্য ঋণ দেয় এবং চাকরীজীবিদের Personal Loan দিয়ে থাকে।
আসুন প্রথমে জানি কোন কোন ব্যাংকগুলো বিনা জামানতে ঋণ দিয়ে থাকে।
বিনা জামানতে ঋণ দেয় কোন ব্যাংক
বেকার যুবকদের বিনা জামানতে ঋণ দেয়ার ব্যাংক হচ্ছে কর্মসংস্থান ব্যাংক। ব্যাংকটি মূলত দেশের বেকার বিশেষ করে শিক্ষিত বেকার যুবদের আত্মকর্মসংস্থান তৈরিতে ঋণ সহায়তা দেয়ার লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে চালু করা হয়। তাছাড়া বর্তমানে সোনালী ব্যাংক সহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক শর্ত অনুযায়ী জামানত বিহীন ঋণ দিয়ে থাকে।
যেসব ব্যাংক বিনা জামানতে ঋণ দেয়
- কর্মসংস্থান ব্যাংক;
- সোনালী ব্যাংক;
- অন্যান্য বাণিজ্যিক সমূহ।
আপনি যদি বিনা জামানতে ঋণ নিতে চান, তাহলে যে ব্যাংকে আবেদন করবেন তাদের জামানত বিহীন ঋণের শর্তগুলো জেনে নিতে হবে।
আরও পড়ুন
কয়েকটি ব্যাংকের জামানত বিহীন লোন নেয়ার শর্তগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক।
কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিনা জামানতে ঋণ
কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে আপনি যদি কোন রকমের জামানত ছাড়াই ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা ব্যাংক ঋণ নিতে পারবেন তবে এর কিছু শর্ত আছে।
কর্মসংস্থান ব্যাংকের বিভিন্ন কর্মসূচি অনুযায়ী থেকে Interest Rate ৮% থেকে ১০% হতে পারে।
কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পাওয়ার শর্ত
- আবেদনকারীকে বাংলাদেশের নাগরিক এবং বেকার/অর্ধ বেকার হতে হবে;
- যে শাখায় আবেদন করবেন সে শাখার কার্যএলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। স্থায়ী বাসিন্দা না হলে শাখার কার্যএলাকার কোন স্থায়ী বাসিন্দাকে ঋণের গ্যারান্টার হতে হবে;
- সর্বনিম্ন ৫ম শ্রেণি পাশ হতে হবেে;
- আবেদনকারীর বয়স ১৮ হতে ৪৫ বছর হতে হবে। তবে পুরাতন ঋণগ্রহীতাদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা শিথিলযোগ্য;
- ঋণ পেতে হলে, প্রকল্প পরিচালনার বিষয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ/অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এজন্য যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, বিসিক, সোশ্যাল ডেডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এসডিএফ) বা অন্য কোন সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ থাকতে হবে;
- ঋণ ব্যবহারের যোগ্যতাসহ ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা ও আর্থিক আচরণে সুনামের অধিকারী হতে হবে;
- উদ্যোক্তাকে ইকুইটি বহনের ক্ষমতা থাকতে হবে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে);
- অন্য কোনো ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপী হলে ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন না;
- ঋণ নীতিমালার অন্যান্য নিয়ম অনুসরণে সক্ষম হতে হবে।
কিভাবে বিনা জামানতে ঋণ পাওয়ার আবেদন করবেন
যদি উপরে উল্লেখিত সমস্ত বিষয়াদি আপনার সাথে মিলে যায় এবং আপনি যদি উপরে উল্লেখিত বিষয়টির সাথে একমত পোষণ করেন, তাহলে এবার জেনে নেয়া দরকার কিভাবে এই ঋণ সেবা নিবেন?
যেহেতু , এই ঋণ সেবা কর্মসংস্থান ব্যাংক কর্তৃক আপনি পাবেন, সে জন্য প্রথমত কর্মসংস্থান ব্যাংকের ঋণ নেয়ার আবেদন ফরম রয়েছে সেটি ফিলাপ করে নিতে হবে।
আর এই ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে যে ফরম রয়েছে এবং আরো যে সমস্ত যাবতীয় ডিটেলস রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেয়ার জন্য তাদের কন্টাক্ট সেন্টারে যোগাযোগ করুন।
কর্মসংস্থান ব্যাংকের ঋণ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে পারেন ব্যাংকের ওয়েবসাইট ও হেল্পলাইন থেকে। নিচে ব্যাংকের ওয়েবসাইট ও হেল্পলাইন নম্বর দেয়া হলো। আপনি কাস্টমার সার্ভিস প্রতিনিধির সাথে কথা বলে সঠিক গাইডলাইন জেনে নিতে পারবেন।
- হেল্পলাইন: 02-47111141
- ওয়েবসাইট: https://www.kb.gov.bd
- ইমেইল-info@kb.gov.bd
সোনালী ব্যাংক থেকে বিনা জামানতে ঋণ
সোনালী ব্যাংক বিনা জামানতে কয়েকটি লোন দিয়ে থাকে। তার মধ্যে খুব সাধারণ ও কমন ঋণ হচ্ছে,
- ক্ষুদ্র ব্যবসায় ঋণ (৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জামানত ছাড়া)
- চাকরীজীবিদের জন্য পার্সোনাল লোন
সোনালী ব্যাংক ক্ষুদ্র ব্যবসা ঋণ
আপনার যদি কোন ক্ষুদ্র ব্যবসা থাকে আপনি ব্যবসার প্রসারের জন্য সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। এ ঋণের বার্ষিক চক্রবৃদ্ধি সুদের হার হচ্ছে ৯%।
সোনালী ব্যাংক ক্ষুদ্র ব্যবসা ঋণের জন্য প্রয়োজন হবে, আবেদনকারীর ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র, হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, নিজ দোকান হলে খাজনা পরিশোধের রসিদ, ভাড়া দোকান হলে ভাড়ার চুক্তিনামা। গত ৩ বছরের আয় ব্যয় বিবরণী, দোকানের Inventory অর্থাৎ মজুদ পণ্যের মুল্যসহ বিবরণ ও একজন ব্যক্তিগত জামিনদাতা।
চাকরিজীবিদের জন্য পার্সোনাল লোন
শিক্ষক ও সরকারি চাকরিজীবিদের জন্য জামানতবিহীন ব্যক্তিগত ঋণ সুবিধা আছে। এজন্য সবচেয়ে সুবিধা হয়, যদি আপনার বেতন সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে হয়ে থাকে। তাছাড়া, সরকারি চাকরিজীবিদের জন্য, ফ্ল্যাট ক্রয় ও বাড়ি নির্মাণ ঋণ ও প্রদান করা হয়।
তবে, সাধারণ পার্সোনাল লোন হিসেবে ৫০ হাজার টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কোন জামানত ছাড়াই ঋণ নিতে পারবেন।
অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক
বর্তমানে প্রায় সকল বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো অনিরাপদ/ জামানত বিহীন ঋণ সুবিধা চালু করেছে। বেশিরভাগ ব্যাংকগুলো সর্বনিম্ন ৫০,০০০ টাকা থেকে শুরু করে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিবেচনায় সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ/৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে।
এসব ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার জন্য, আপনার এলাকার ব্যাংকে গিয়ে যোগাযোগ করবেন এবং তাদের ঋণের পরিমাণ ও কাগজপত্র কি লাগবে তা জেনে নিতে পারেন।
সাধারণত, ব্যাবসার ক্ষেত্রে কমপক্ষে ব্যবসার বয়স ২ বছর হতে হবে, আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি, ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট এসব ডকুমেন্ট প্রয়োজন হবে।
FAQs
বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক বিনা জামানতে ঋণ দেয়। তাছাড়া, সোনালী ব্যাংক ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে এবং চাকরিজীবি ব্যক্তিদের বিনা জামানতে ঋণ প্রদান করে থাকে। বর্তমানে অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও বিনা জামানতে বিভিন্ন শর্তে ঋণ দিয়ে থাকে।
প্রাথমিকভাবে ৫০,০০০ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনা জামানতে ঋণ পাওয়া যেতে পারে। যা নির্ভর করে ব্যাংকের শর্তের উপর।