১৬টি লাভজনক কৃষি ব্যবসার আইডিয়া ২০২৪
সারা বিশ্বেই দিন দিন বাড়ছে খাদ্যদব্যের চাহিদা। তাই কৃষিতে বাংলাদেশের রয়েছে অনেক সম্ভাবনা। আসুন জানি কৃষি ব্যবসার লাভজনক কিছু আইডিয়া সম্পর্কে।
আগে বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ ছিল যখন কৃষি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল আমাদের এই দেশ। কিন্তু এখন চাল-গম সহ অনেক প্রয়োজনীয় খাদ্যদব্যই আমাদেরকে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। অথচ আমরা চাইলেই নিজেরাই অনেক পন্যের উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মেটাতে পারি।
আমাদের গ্রামের বাড়িতে পতিত জমি, আশেপাশের খোলা স্থান, বাড়ির সামনের উঠান সহ বিভিন্ন স্থানে ফাঁকা জায়গা থাকে। এসব জায়গায় আমরা খুব সহজেই অল্প খরচে আমাদের কৃষি ফসল চাষ করতে পারি। একটি স্টার্টআপ কৃষি ব্যবসা শুরু করে আমরা সহজেই আমাদের বেকারত্ব দূর করতে পারি। হতে পারি একজন সফল ব্যবসায়ী।
আসুন জানি কৃষি ব্যবসার ১৬টি আইডিয়া সম্পর্কে যেগুলোর বর্তমানেও চাহিদা আছে এবং ভবিষ্যতেও অনেক চাহিদা বৃদ্ধি পাবে।
কৃষি ব্যবসার লাভজনক আইডিয়া
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সব কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। এখন চাকরির বাজার খুব খারাপ। সেদিক বিবেচনায় ব্যবসা অবশ্যই একটি ভাল ডিসিশন। কৃষি ব্যবসা হতে পারে খুব লাভজনক, এমনকি কৃষি ব্যবসা করে কোটিপতি ও হওয়া যায়। আজ আমরা জানব কৃষি ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে।
১. সবজি চাষ
কৃষি ব্যবসা বলতে শুরুতেই আমাদের মাথায় আসে সবজি চাষ। আমরা অনেকেই বাসাবাড়িতেও ফাঁকা স্থান পেলে সবজি চাষ করে থাকি। সেক্ষেত্রে যদি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষাবাদ শুরু করা যায় তাহলে পারিবারিক প্রয়োজন মিটিয়ে বাজারজাত করা যাবে এবং ভালো আয় করা যাবে।
শুরুতে পুঁই শাক, লাল শাক, ঢেঁড়স, শিম, মিষ্টিকুমড়া, শসা ইত্যাদি বিভিন্ন সবজি চাষ করা যাবে। সুবিধা অনুযায়ী পরে সবজির প্রকারে প্রসার আনা যাবে।
সবজি খামার করার ক্ষেত্রে আপনার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের অভাব থাকলে প্রয়োজনে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।
আরও পড়ুন: ১০টি স্টক ব্যবসার আইডিয়া
২. মাছ চাষ
মাছের চাষ সুপ্রাচীনকাল থেকেই পরিচিত। নিজস্ব পুকুর থাকলে মাছ চাষ ব্যবসা খুবই লাভজনক। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ শেষে পুকুরের আকার অনুযায়ী সঠিকভাবে মাছ চাষ হতে পারে আয়ের অন্যতম উৎস।
৩. পোল্ট্রি খামার
গ্রামীণ পরিবেশে আরো একটি উল্লেখযোগ্য ব্যবসা হলো পোল্ট্রি খামার। সঠিক স্থান নির্বাচন করে, সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে এই ব্যবসায় লাভবান হওয়া যায়। বাড়ির পাশে খোলা জায়গা থাকলে সেখানে ঘর তৈরি করে পোল্ট্রি খামার স্থাপন করা যায়।
স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে সঠিক টিকাদান পদ্ধতি অবলম্বন করে রোগমুক্ত পদ্ধতিতে খামার ব্যবস্থাপনা করতে হবে। হাঁস মুরগীর পাশাপাশি কবুতর বা কোয়েল পাখি পালন ও একইভাবে লাভজনক।
৪. জৈব সার তৈরি
কৃষিজমিতে এখন আর অগের মত রাসায়নিক সার ব্যবহার হয়না। এখন অনেকেই জৈব সার বা কম্পোস্ট সার বা কেঁচো সারের প্রতি আগ্রহী হয়। এসব সার ব্যবহারে ফলন বৃদ্ধির পাশাপাশি তা মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর ও বটে। তাই এ জৈব সার তৈরি হতে পারে একটি লাভজনক ব্যবসা।
এক্ষেত্রে আরেকটি সার হলো “Quick Compost” সার। সাধারণ কম্পোস্ট সার তৈরিতে অনেক সময় লাগে তাই কুইক কম্পোস্ট সার বেশি জনপ্রিয়।
৫. গবাদিপশু পালন
প্রাচীনকাল থেকেই গরু-ছাগল পালন লাভজনক ব্যবসা হিসেবে পরিচিতি পেয়ে আসছে। গ্রামে বসবাসকারী নিম্ন আয়ের মানুষরা খুব অল্প পুজিঁ দিয়েই ছাগল পালন করতে পারে। এক্ষেত্রে ছাগলের ঘর এবং ঘর তৈরির স্থান বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখতে হবে। গবাদি পশু পালনের মূলধন অর্থায়নের জন্য ব্যাংক লোন নিতে পারেন।
আরও পড়ুন: মহিলাদের জন্য ঘরে বসে ব্যবসা
৬. গবাদি পশুর খাদ্য উৎপাদন
গবাদি পশু পালন আমাদের দেশে বেশি লক্ষ্যনীয় কিন্তু গবাদি পশু খাদ্য তৈরি প্রতিষ্ঠান বেশি নেই। আবার প্রতিষ্ঠান থাকলেও তারা বেশি দামে নিম্ন মানের খাদ্য সরবরাহ করে থাকে।
সেদিক বিবেচনায় আপনার জন্য পশু খাদ্য তৈরি ব্যবসা হতে পারে খুবই লাভজনক। কারণ বেশিরভাগ মানুষ পশু পালনে আগ্রহী। তাই এসব পশুর জন্য পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য তৈরির দায়িত্ব নিতে পারেন আপনি। এত আপনার ও লাভ আর পশু ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হবে।
৭. হিমায়িত মুরগীর মাংস উৎপাদন
আজকাল ফ্রোজেন ফুডের চাহিদা ব্যাপক। ফ্রিজ থেকে বের করেই তেলে ভেজে পরিবেশন করা যায় বলে চাকুরিজীবী ব্যস্ত গৃহিনীদের প্রথম পছন্দ এই ফ্রোজেন ফুড। এই ফুডের মধ্যে সবচেয়ে বড় স্থান দখল করে আছে চিকেন। আর বাজারে যেসব হিমায়িত মুরগী পাওয়া যায় তা সবসময় স্বাস্থ্যসম্মত হয় না। তাই হিমায়িত মুরগীর মাংস উৎপাদন ব্যবসা হতে পারে লাভজনক একটি ব্যবসা।
৮. ফুলের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা
জোটে যদি একটি পয়সা, খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি।
যদি জোটে দুটি পয়সা, ফুল কিনে নিয়ো হে অনুরাগী।
ফুলের প্রতি মানুষের আকর্ষণ সবসময়। মানুষ ফুল ভালোবাসে। যেকোনো বিশেষ দিনের জন্যই ফুল হয়ে উঠে আমাদের সঙ্গী। তাই এই ফুলের ব্যবসা হতে পারে দারুন একটি ব্যবসা।
যদি কৃষি জমির পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে মাটি পরীক্ষা করে উপযোগী ফুল গাছ চাষ করে ভালো আয় করা যায়। আমাদের দেশে বিয়ে বাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অকেশনে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আর এখন আমাদের মাটিতে অর্কিডসহ বেশ কিছু বিদেশী ফুলের চাষ হয়।
৯. মাশরুম চাষ
মাশরুম একটি পুষ্টিকর ও ঔষধিগুণাগুণ সম্পন্ন খাবার। এর চাহিদা ব্যাপক। বিশেষ করে ঔষধি গুণের কারণেই এর চাহিদা বেশি। এই মাশরুম চাষ করে নিজের পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ভালো আয় করা সম্ভব।
তবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করার জন্য অবশ্যই এর প্রশিক্ষণ নিতে হবে। মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের নিজস্ব মাশরুম ক্যালেন্ডার আছে যা অনুসরণ করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। বিভিন্ন চাইনিজ রেস্টুরেন্ট গুলোতে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
১০. হাইড্রোপনিক চাষ
চাষাবাদের জন্য অধিকাংশ সময় আমাদের শুকনা মাটি দরকার হয়। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় নিচু জমিগুলো পানিতে ডুবে থাকার কারণে তাতে চাষাবাদ করা যায় না। এ সমস্যা দূর করতে পারে হাইড্রোপনিক চাষ পদ্ধতি।
এই পদ্ধতিতে মাটির পরিবর্তে পানিতে ফসল চাষ করা হয়। এ পদ্ধতি আমাদের দেশে নতুন। তাই এটা হতে পারে একটি সফল ব্যবসা পদ্ধতি। বিশেষ করে যারা নিচু এলাকায় বাস করেন তাদের জন্য এটি খুবই সুবিধাজনক।
১১. শামুক চাষ
নদীর ধারে, বিলের পাশে ছোটবেলা থেকেই আমরা শামুক, ঝিনুক দেখে এসেছি। এই শামুক এখন আর ফেলে দেয়ার জিনিস নয়। শামুক চাষ করে লাভবান হওয়া সম্ভব। যদি নিজের হাঁস মুরগির খামার থাকে বা মাছের খামার থাকে তাহলে নিজের খামারে ব্যবহার করে যেমন অধিক উৎপাদন সম্ভব তেমনি অন্য মাছ চাষী বা খামারীদের কাছে বিক্রি করেও লাভবান হতে পারবেন।
কারণ শামুক ব্যবহার করে তৈরি খাবার বিভিন্ন মাছের যেমন প্রিয় তেমনি শামুক খাওয়ালে হাঁস মুরগির ডিম উৎপাদন ও ভালো হয়।
১২. ঔষধি গাছের চাষ
ঔষধি গাছের চাহিদা সবসময়ই ব্যাপক। বিভিন্ন রোগ নির্মুল করতে ঔষধি গাছের তুলনা নেই। আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় ঘৃতকুমারী বা এলোভেরা গাছ। এছাড়া রয়েছে নিম, তুলসি, অর্জুন, অশ্বগন্ধা, কালোমেঘ, হরিতকি, বহেরা, পাথরকুচি, লজ্জাবতী, থানকুনি সহ বিভিন্ন গাছ। এসব গাছের রয়েছে প্রচুর চাহিদা। এই গাছ চাষ হতে পারে লাভজনক ব্যবসা।
১৩. নার্সারির ব্যবসা
আজকাল কমবেশি সবাই গাছ লাগাতে ভালোবাসে। শহরাঞ্চলে বাসাবাড়িতে ও এর ছোঁয়া দেখা যায়। জায়গা না থাকলে বারান্দায় অনেকেই সখের চারাটি রোপন করে। তাই দেশি বিদেশী বিভিন্ন ফুলের চারা সহ বিভিন্ন বিদেশী ফল ও সবজির গাছ সহ নার্সারি ব্যবসাটি হতে পারে আপনার জন্য দারুন একটি আয়ের উৎস।
১৪. বাঁশ গাছ উৎপাদন
বাশেঁর চাহিদা সবসময়েই ব্যাপক থাকে। সাধারণত নির্মাণাধীণ ভবনে বাঁশ বেশি ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ও থাকে বাঁশ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র। এখন আশেপাশে প্রায় সবখানেই মানুষ বিশাল বিশাল ভবন নির্মাণে ব্যস্ত। আর এইসব ভবনে ব্যবহৃত হয় বাঁশ। তাই বাঁশের ব্যবসাটি হতে পারে খুবই লাভজনক।
১৫. রঙিন মাছ উৎপাদন
কিছু মানুষ খুব সৌখিন হয়ে থাকে। আর তাদের এই সৌখিনতাকে প্রাধান্য দিতে তাদের কক্ষে একুরিয়ামে সজ্জিত থাকে সুন্দর রঙিন মাছ। দিন দিন এসব রঙিন মাছের চাহিদা বাড়ছে তাই এটি হতে পারে আপনার জন্য দারুন একটি সুযোগ। সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে সঠিক পদ্ধতিতে এই মাছ চাষ করে লাভবান হওয়া সম্ভব।
১৬. ছাদবাগান
শহরের মানুষের জন্য খোলা স্থান পাওয়া মুশকিল। তাছাড়া গ্রামেও এখন অনেকেই পাকা দালান তৈরি করে থাকে। সেই দালানের ছাদে চাষাবাদ হতে পারে একটি দারুন উদ্যোগ।
পরিশেষে বলা যায় যে যেকোনো ব্যবসা শুরুর আগে দরকার ইচ্ছাশক্তি, প্রচুর পরিশ্রম ও ধৈর্য্য। ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যবসায়িক নীতি নৈতিকতা মেনে চলতে হবে।
উপরে বেশ কিছু ব্যবসার ধারণা দেয়া হয়েছে। আপনি আপনার পছন্দ মতো ও সুবিধা অনুযায়ী যেকোনো একটা শুরু করতে পারেন। তবে ব্যবসা শুরুর আগে প্রশিক্ষণ নেয়া থাকলে সে ব্যবসায় দ্রুত উন্নতি সম্ভব।
আরও ব্যবসার আইডিয়া
- গ্রামের ব্যবসার আইডিয়া
- মেয়েদের ব্যবসার আইডিয়া
- অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা করার নিয়ম