যাকাত ও ফিতরার মধ্যে পার্থক্য কি
যাকাত ও ফিতরা সম্পূর্ণ আলাদা ২টি বিষয়। জানুন যাকাত ও ফিতরার মধ্যে পার্থক্যগুলো কি কি এবং এগুলো নিয়ে বিস্তারিত।
ইসলামী শরীয়াতে অন্যতম ৫টি স্তম্ভের মধ্যে যাকাত ১টি। প্রত্যেক মুসলিম ও সম্পদবান লোক যার নিসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তাকে যাকাত প্রদান করতে হবে। ফিতরা শরীয়াতের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে না থাকলেও এটির গুরুত্ব অনেক।
আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক যাকাত ও ফিতরার মধ্যে পার্থক্য গুলো।
যাকাত কি
যাকাত একটি আরবি শব্দ যার আভিধানিক অর্থ হলো পবিত্রতা ও বৃদ্ধি পাওয়া। ইসলামী শরীয়াতে পূর্ণবয়স্ক সকল মুসলিম নারী-পুরুষের জীবনযাপন ব্যয় বাদ দেয়ার পর সম্পূর্ণ ১ বছর পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট পরিমান (নিসাব পরিমাণ) সম্পদ থাকলে তার ৪০ ভাগের ১ ভাগ বা ২.৫ শতাংশ প্রতিবছর দান করাই হল যাকাত। এতে সম্পদের পবিত্রতা বজায় থাকে।
নিসাব পরিমাণ সম্পদ হচ্ছে ৭.৫ তোলা বা ৮৭.৪৫ গ্রামের বেশি স্বর্ণ, ৫২.৫ তোলা বা ৬১২.৩৫ গ্রামের বেশি রুপার সমপরিমাণ অর্থ। গবাদি পশু সম্পদ হলে, ৪০টি ছাগল, ৩০টি গরু, ৫টি উট।
আরও পড়ুন:
- যাকাত কাকে বলে
- যাকাত প্রদানের খাত কয়টি
ফিতরা কি
ফিতরা আরবি শব্দ। এটি ইসলামে যাকাতুল ফিতর বা সাদাকাতুল ফিতর বলে অভিহিত। যাকাতুল ফিতর অর্থ-ফিতরের যাকাত এবং সাদাকাতুল ফিতর-অর্থ ফিতরের সদকা। ফিতরা (Fitra), ফেতরা বা ফাতুর বলতে বোঝায় সকাল বেলার খাদ্যদ্রব্যকে।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঈদের নামাজের আগে এই ফিতরা দান করা ওয়াজিব। পবিত্র রমজান মাসে সকাল বা সন্ধার আহার গ্রহণ করা হয় বিধায় সকালের আহারের পরিমাণ আহার বা অর্থ গরীবদের মাঝে বিতরন প্রদান করাই হলো ফিতরা। রোজাদারদের কোন প্রকার ছোটখাট ভুল হয়ে থাকলে তার জন্য যাকাতুল ফেতরা দান করা হয়।
ফিতরা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে না থাকলেও এটি ওয়াজিব আমলগুলোর মধ্যে একটি।
ইবনে ওমর হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজ উম্মতদের, ক্রীতদাস ও স্বাধীন, নারী ও পুরুষ, ছোট ও বড় সবার মাথা পিছু এক ছা’ পরিমাণ খেজুর বা যব যাকাতুল ফিতরা হিসাবে ওয়াজিব করেছেন। ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন’।
যাকাত ও ফিতরার পার্থক্য
যাকাত ও ফিতরার মূল পার্থক্য হলো, যাকাতের ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তির মালিকানায় নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকলে তাকে সম্পদের ২.৫ শতাংশ হারে যাকাত প্রদান করতে হয়, কিন্তু ফিতরার ক্ষেত্রে সম্পদের পরিমাণ পূর্ণ এক বছরকাল স্থায়ী হবার প্রয়োজন হয় না বরং ঈদুল ফিতরের দিন সকালে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেই তার ওপর ফিতরা দিতে হয়।
যাকাত ও ফিতরার ক্ষেত্রে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। নিচে তা আলোচনা করা হলো;
বিষয় | যাকাত | ফিতরা |
---|---|---|
অর্থ | যাকাত শব্দের অর্থ পবিত্রতা ও বৃদ্ধি। | ফিতর বা ফাতুর শব্দের অর্থ সকালের খাদ্যদ্রব্য বা যা দ্বারা রোজাদারগণ রোজা ভঙ্গ করেন। |
শর্ত | ব্যক্তির মালিকানায় নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকলেই তাকে সম্পদের ২.৫ শতাংশ হারে যাকাত প্রদান করতে হয় | নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছরকাল স্থায়ী হবার প্রয়োজন নেই বরং ঈদুল ফিতরের দিন সকালে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেই তার ওপর ফিতরা দিতে হয়। |
উদ্দেশ্য | যাকাত অর্জিত সম্পদের পবিত্রতা রক্ষার জন্য দেয়া হয় | ফিতরা রমজান মাসে রোজাদরদের ভুল-ত্রুটির কাফ্ফারা ও সাদাকাহ সাদাকাহ হিসেবে দেয়া হয়। |
পরিমাণ | যাকাতের পরিমাণ হচ্ছে সম্পদের ৪০ ভাগের ১ ভাগ বা ২.৫ শতাংশ | ফিতরা প্রদান করতে হবে ১ “ছা” যার পরিমাণ গম ২ কেজি ৪০ গ্রাম (প্রায়) ও চাল ২ কেজি ৫০০ গ্রাম (প্রায়) |
খাত | যাকাত প্রদানের ৮টি খাত রয়েছে | বেশিরভাগ আলেমদের মতে শুধুমাত্র গরিব, অসহায় ও দুস্থ লোকদের ফিতরা প্রদান করতে হবে। |
ইবাদত | যাকাত ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত। আল্লাহ তা’লা পবিত্র কুরআনে, সূরা তওবার ৬০ নম্বর আয়াতে যাকাতের কথা উল্লেখ করেছেন। | ফিতরা একটি ওয়াজিব ইবাদত। |
FAQs
শেষ কথা
যাকাত হলো প্রতিবছর আমাদের জীবনযাপন ব্যয় ও ব্যবহার্য্য সম্পদ ব্যাতীত ব্যবসায়ীক পন্য ও নগদ অর্থের পরিমাণ নিসাব পরিমানের সমান হলেই সে সম্পদের উপর ২.৫ শতাংশ যাকাত দিতে হয়। উল্লেখ্য সম্পদ পূর্ণ ১ বছর মালিকানায় থাকতে হবে।
অপরদিকে ফিতরা হচ্ছে একটি সাদাকাহ যার জন্য নিসাব পরিমান সম্পদ থাকলেই রমজান মাসে ঈদুল ফিতরের জামায়াতের আগে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফিতরা পরিশোধ করতে হয়।
আশা করি যাকাত ও ফিতরার পার্থক্য পরিস্কারভাবে বুঝতে পেরেছেন। এ বিষয়ে আরো জানতে নিচের আর্টিকেলগুলো পড়তে পারেন।
যাকাত বিষয়ে আরও তথ্য
- যাকাত প্রদানের খাত কয়টি
- যাকাত কাকে বলে