ব্যাংকে টাকা রাখা কি হারাম?

ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী সুদ হারাম। তাই বলে কি ব্যাংকে টাকা রাখা কি হারাম? কুরআন ও হাদীদের আলোকে এই প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করুন।

ব্যাংকে টাকা জমা রাখা
Advertisement

ব্যাংকে টাকা রাখা হারাম কিনা তা কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন সুদ আয়ের জন্য কেউ টাকা রাখলে তা অবশ্যই হারাম, অন্য দিকে কেউ নিরাপত্তার জন্য ব্যাংকে টাকা রেখেছে কিন্তু তার সুদ আয় গ্রহণ করে না, সেক্ষেত্রে এটি হারাম হবে না।

আবার ইসলামী ব্যাংকগুলোতে আপনি কোন নীতির ভিত্তিতে টাকা রাখছেন, এবং আপনার বিনিয়োগকৃত টাকা ব্যাংক কোথায় এবং কোন নীতিতে বিনিয়োগ করছে তার উপর নির্ভর করবে আপনার টাকা রাখা হারাম নাকি হালাল।

যদিও বাংলাদেশে অনেক ইসলামী ব্যাংক দাবি করে যে এগুলো শরীয়াহভিত্তিক পরিচালিত, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এরা শরীয়াহ সঠিকভাবে অনুসরণ করেনা। তাছাড়া, এসব ব্যাংকের আমানত গ্রহণ ও ঋণ প্রদান কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ। তাই, ইসলামী ব্যাংক হলেই যে এখানে টাকা রেখে মুনাফা নেয়া জায়েজ হবে, তা সঠিক নয়।

যে কোন ব্যাংক হোক ইসলামী শরীয়াহভিত্তিক বা অন্যান্য ব্যাংক সঠিকভাবে ইসলামী শরীয়াহ অনুসরণ না করলে, এসব ব্যাংকে টাকা রেখে সুদ/মুনাফা নেয়া হারাম।

Advertisement

তাই সুদ ও হারাম সম্পর্কে আমাদের সঠিক জ্ঞান না থাকলে আমরা কখনোই হারাম হালালের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারবো না। জানুন ইসলামী ব্যাংক ও প্রচলিত ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য

এ ব্যাপারে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আপনার সুদ এবং ইসলামে ঋণ ও ব্যবসা বাণিজ্যের বিধান জানা অত্যন্ত জরুরী। তাছাড়া এ বিষয়ে একজন ইসলামিক স্কলারের পরামর্শ নেয়া উচিত।

ব্যাংকে টাকা জমা রাখা

ব্যাংকের সুদের টাকা কি হারাম

সুদকে আরবি তে রিবা বলা হয় যা আমরা শুদ্ধ ভাষায় মুনাফা বা ইন্টারেস্ট (Interest) বলে থাকি।

Advertisement

ব্যাংকে টাকা রাখার পর আপনাকে ব্যাংক থেকে যেই বাড়তি টাকা দেয়া হয় সেটা মুনাফা বা সুদ যা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম।

সুদের বৈধতা এবং অবৈধতা বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

و أحل الله البيع وحرم الربوا   

আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম। (অংশবিশেষ) সূরা বাকারা: ২৭৫

সূরা বাকারার ২৭৮-২৭৯ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

Advertisement

يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ وَذَرُوا۟ مَا بَقِىَ مِنَ ٱلرِّبَوٰٓا۟ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا۟ فَأْذَنُوا۟ بِحَرْبٍۢ مِّنَ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ۖ وَإِن تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوسُ أَمْوَٰلِكُمْ لَا تَظْلِمُونَ وَلَا تُظْلَمُونَ

Advertisement

হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা কিছু অবশিষ্ট আছে তা পরিত্যাগ করো। যদি তোমরা মুমিন হও। যদি তা না কর তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের সংবাদ জেনে নাও। -সূরা বাকারা : ২৭৮-২৭৯

আল্লাহ কোন সুদখোর অকৃতজ্ঞ পাপীকে পছন্দ করেন না (সূরা আল বাকারা-২৭৬)।

আরো ইরশাদ করেন- তোমরা  যে সুদ দিয়ে থাক, যাতে মানুষের মালের সাথে মিশে তা বেড়ে যায়, আল্লাহর কাছে তা মোটেও বাড়ে না (সূরা রূম-৩৯)। 

হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স:) বলেন- সুদের অর্থ জমা করার পরিণাম হচ্ছে অসচ্ছলতা।

অন্য এক জায়গায় র্বণনা করা হয়েছে সুদের অর্থ যতই অধিক হোক না কেন অবশেষে তার পরিণতি হয় অসচ্ছলতা (তারগীব ও তারহীব, ইবন মাজাহ, হাকিম)। ব্যাংক থেকে সুদের টাকা নিয়ে তা দিয়ে সচ্ছলতা বৃদ্ধি করা যায় না বরং তা ধ্বংস ডেকে আনে।

অর্থাৎ কুরআন ও হাদীসের বর্ণনা থেকে এটি স্পষ্ঠ যে ব্যাংক থেকে নেওয়া সুদের টাকা হলো হারাম আয় যা ইসলামে নিষিদ্ধ।

ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া কি জায়েজ

যে সকল ব্যাংক ঋণের উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একটি নির্দিষ্ট হারে সুদ নিয়ে থাকে, সেই ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া জায়েজ নয়। ইসলামী শরীয়ত অনুসারে সুদের ভিত্তিতে ঋণ না নিয়ে মুশারাকামুরাবাহা পদ্ধতিতে ঋণ নেয়া যাবে।

ইসলামী অর্থব্যবস্থার ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া জায়েজ কিনা তা নির্ভর করে সেই ব্যাংকের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের উপর। ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার ব্যাপারে ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে মতবিরোধ আছে।

তবে ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী লোন নেওয়ার পরিবর্তে মুশারাকা এবং মুরাবাহা করা যাবে যা অনেকেরই অজানা। 

মুশারাকা

মুশারাকা অর্থব্যবস্থায় ব্যাংক কর্তৃকপক্ষ এবং ঋণগ্রহীতা যেকোনো ধরণের শিল্প বা প্রকল্পে একত্রে সমানভাবে মূলধন বিনিয়োগ করে থাকে। প্রকল্পের উন্নতি বা অবনতির উপর ভিত্তি করে লাভ ক্ষতি নির্ণয় করা হয় এবং সেই অনুযায়ী অর্থ প্রদান করা হয়। এটি একটি অংশীদারিত্ব ভিত্তিক ব্যবস্থা।

মুশারাকা নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে দেখতে পারেন, মুদারাবা ও মুশারাকার পার্থক্য

মুরাবাহা

মুরাবাহা ব্যবস্থায় গ্রাহকদের দ্বারা অনুরোধ করা কোন বিশেষ সম্পদ ব্যাংক নির্ধারিত মূল্যে ক্রয় করে বা বন্ধক রেখে ঋণগ্রহীতাকে অর্থ প্রদান করে। এরপর গ্রাহক কিস্তির মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকে গ্রহণকৃত অর্থ ফেরত দিয়ে দেয় এবং নিজস্ব সম্পদ ফিরিয়ে নেয়।

এই দুই উপায়ে ব্যাংক থেকে লোন নিলে তা সুদের পর্যায়ে পরে না এবং ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী এভাবে লোন নেওয়া সম্ভব।

শেষকথা

ব্যাংকিং করতে আমাদের ব্যাংক নির্বাচনে সুদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ইসলামী ব্যাংকগুলো ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক পরিচালিত হওয়ার দাবি করে, কিন্তু যথাযথভাবে তারা ইসলামী শরীয়াহ অনুসরণ করে না। বাংলাদেশে বেশিরভাগ ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ।

কোন ব্যাংকের কার্যক্রম পরিপূর্ণভাবে ইসলামী বিধি মোতাবেক পরিচালিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সেই ব্যাংকে টাকা রেখে সুদ/মুনাফা আয় করা সম্পূর্ণ হারাম।

সুদ সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞানতা ও অবহেলার কারণে, নিজেদের অজান্তেই আমরা হয়তোবা হারাম অর্থ ব্যবহার করছি এবং পাপী হচ্ছি। তাই, ব্যাংকিং ও সুদ বিষয়ে কোন ইসলামিক বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করে বা স্টাডি করে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা উচিত।

ব্যাংকে টাকা রাখার বিষয়ে সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর

ব্যাংকের সুদের টাকা কি করব?

আমরা অনেকেই না চাইলেও আমাদের ব্যাংক একাউন্টে জমাকৃত টাকার উপর বছরে ২ বার সুদ যুক্ত হয়। যেহেতু সুদ হারাম, এটি আপনি নিজের স্বার্থে ব্যবহার করা জায়েয নয়। তাই, দুঃস্থ ও অসহায় যাদের টাকার প্রয়োজন তাদেরকে সাদকা করে দেয়াই উত্তম হতে পারে।

সুদের টাকা কি মসজিদে দান করা যাবে

না, সুদের টাকা মসজিদে দান করা যাবে না কারণ সুদ সম্পূর্ণ হারাম ও নিষিদ্ধ। তবে সুদের টাকা নিজে ব্যবহার করলে, দুঃস্থ ও অসহায়দের মধ্যে দান করতে পারেন।

সুদের টাকা দান করা যাবে কি

হ্যাঁ, সুদের টাকা গরীব, অসহায় ও জনস্বার্থে দান করা যাবে। তবে দানের উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে সুদ গ্রহণ করা উচিত নয়। যদি কেউ বাধ্যতামূলকভাবে ব্যাংকে টাকা রাখতে হয়, এবং সুদ গ্রহনের ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও একাউন্টে অতিরিক্ত সুদ আসে তা দান করা যায়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *