বাংলাদেশের কোন কোন ব্যাংক প্রবাসী লোন দেয় ও কত টাকা দেয়?
আপনি কাজের ভিসায় বিদেশ যেতে চাইলে বা প্রবাসী হয়ে থাকলে এই ৭টি ব্যাংক থেকে আপনার প্রয়োজন ও সুবিধামত প্রবাসী লোন পেতে পারেন।

আপনি খুজছেন, কোন কোন ব্যাংক প্রবাসী লোন দেয়? এই ব্লগে ব্যাংকের নাম ও তাদের প্রবাসী লোনের নিয়ম, সুদের হার ও পরিশোধের সময় বিস্তারিত শেয়ার করবো, আশা করি আপনার কাজে লাগবে।
প্রবাসে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের অনেকগুলো ব্যাংক লোন দিয়ে থাকে। বিদেশ যাওয়ার আগে আর্থিক সংকটে বিভিন্ন ব্যাংকের অভিবাসন ঋণ বিদেশগামীদের জন্য সহায়ক হতে পারে।
এছাড়া যারা কোনো কারণে বিদেশে প্রতিষ্ঠিত না হতে পেরে দিয়ে বাধ্য হয়ে দেশে ফিরে আসে তাদের নতুন করে কর্মসংস্থানের জন্যও প্রবাসী ব্যাংকের ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে।
কোন কোন ব্যাংক প্রবাসী লোন দেয়?
বাংলাদেশের যে সকল ব্যাংক প্রবাসীদের লোন দিয়ে থাকে, এগুলো হচ্ছে:
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক
- ইসলামী ব্যাংক
- অগ্রণী ব্যাংক
- সোনালী ব্যাংক
- এনআরবি ব্যাংক
- পূবালী ব্যাংক
- ন্যাশনাল ব্যাংক
১. প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন
এটি একটি সরকারি মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংক যা প্রবাসীদের জন্য ঋণ দিয়ে থাকে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ১১৭টি দেশে পৌঁছে গেছে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বাংলাদেশে সবথেকে বেশি প্রবাসী লোন দিয়ে থাকে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক শুধুমাত্র প্রবাসীদের জন্যই ঋণ সুবিধা দিয়ে থাকে। এছাড়া এই ঋণ খুবই সুবিধাজনক, যেমন-
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সুবিধা
- পাসপোর্ট, ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিশন ঠিক থাকলে আবেদনের ৭ দিনের মধ্যেই ঋণ দেওয়া হয়।
- ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ।
- সর্বোচ্চ ২ বা ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে ‘জামানত’ রাখতে হবে না।
- কেউ যদি ঋণ নিয়ে কোনো কিস্তি পরিশোধ না করে মৃত্যুবরণ করেন, তাকে সম্পূর্ণ ঋণ মওকুফ করে দেওয়া হয়।
- তাছাড়া বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের জন্য ১১টি খাতে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে এক ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত লোন দিয়ে থাকে।
অনলাইনে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে লোনের আবেদন করার জন্য নিচের লিংকটিতে ক্লিক করে আবেদন ফর্মটি প্রিন্ট করে নিন। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন ফরম এর পিডিএফ
এরপর পূরণ করা আবেদন ফরম এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্র একসাথে জমা দিয়ে প্রবাসী লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
২. ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন
ইসলামী ব্যাংক ও প্রবাসীদের জন্য ফান্ডিং করে থাকে। প্রবাসীদের জন্য এই ইনভেস্টমেন্ট স্কিমটির নাম হচ্ছে Overseas Employment Investment Scheme (Swapnojatra)।
এই স্কিমে ২ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন দিয়ে থাকে যেটি ২ বছর থেকে ৫ বছরের মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করা যাবে। যিনি কাজের জন্য বিদেশ যাবেন তাকে অবশ্যই ১৮ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
এই লোন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুন – ইসলামী ব্যাংক প্রবাসী লোন পদ্ধতি।
ইসলামী ব্যাংকের অফিসিয়াল ইনফরমেশন দেখুন- Overseas Employment Investment Scheme (Swapnojatra)
৩. অগ্রণী ব্যাংক প্রবাসী লোন
যারা বিদেশে চাকরির উদ্দেশ্যে যেতে চান বা ইতিমধ্যেই ভ্যালিড জব ভিসা সংগ্রহ করেছেন, তাদের জন্য অগ্রণী ব্যাংক প্রবাসী লোন অফার করছে।
পাসপোর্ট, ট্রেনিং, ভিসা, মেডিকেল পরীক্ষা, স্মার্ট কার্ড, কিংবা বিমান টিকিট ইত্যাদি প্রয়োজনীয় কাজগুলো সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে শেষ করা ব্যক্তিরাও এসব কাজে টাকার প্রয়োজন হলে এই লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
উল্ল্যেখ্য, অগ্রণী ব্যাংক প্রবাসী ছাড়াও ছাত্র-ছাত্রীদেরও বিদেশে পড়াশুনার জন্য ঋণ দিয়ে থাকে।
একনজরে অগ্রণী ব্যাংক প্রবাসী লোন সম্পর্কিত তথ্য:
- ঋণ আবেদনকারীর বয়স : ১৮ থেকে ৪৫ বছর
- ঋণের পরিমাণ: ৫০,০০০ টাকা থেকে ৩,০০,০০০ টাকা
- সুদের হার: ১১.৯০% (ব্যাংক নীতিমালা অনুসারে পরিবর্তনশীল)
- ঋণ পরিশোধের সময়: ১৫ থেকে ১৮ মাসের মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে।
- জামানত/গ্যারান্টর: আবেদনকারীর বাবা, মা, ভাই, বোন ব্যক্তিগত গ্যারান্টি দিতে হবে।
অগ্রণী ব্যাংকের অফিসিয়াল তথ্য: Agrani Bank loan for Overseas Worker
৪. সোনালী ব্যাংক প্রবাসী লোন
বিদেশে চাকরির জন্য বিদেশগামী বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য সোনালী ব্যাংক সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে। বিদেশ যাওয়ার প্রকৃত খরচ যেমন বিমান ভাড়া, সরকার নির্ধারিত কমিশন, সার্ভিস চার্জসহ মোট খরচের ১০০% পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা লোন পাবেন।
একনজরে সোনালী ব্যাংক প্রবাসী লোন সম্পর্কে তথ্য:
- আবেদনের যোগ্যতা: বিদেশে চাকরির জন্য ভিসাপ্রাপ্ত ব্যক্তি;
- ঋণের পরিমাণ: ৫০,০০০ থেকে ৩,০০,০০০ টাকা;
- সুদের হার: ১২% সরল সুদ;
- পরিশোধের সময়: ৩ মাস গ্রেস পিরিয়ড সহ ২৪ থেকে ৩৬ মাসিক কিস্তি;
- জামানত: ঘনিষ্ট জামিনদাতা প্রয়োজন।
সোনালী ব্যাংকের অফিসিয়াল ইনফরমেশন: সোনালী প্রবাসী কর্মসংস্থান ঋণ
৫. এনআরবি ব্যাংক প্রবাসী লোন
NRB Bank ও কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য প্রবাসী সহায়তা ঋণ নামে একটি সহজ শর্তে লোন অফার করছে। এই প্রবাসী ঋণ পাওয়ার জন্য, আবেদনকারীর ভিসা, Work Permit অথবা কোম্পানীর পক্ষ থেকে Offer Letter পেতে হবে।
একনজরে এনআরবি ব্যাংক প্রবাসী লোনের তথ্য:
- আবেদনের যোগ্যতা: বিদেশে চাকরির জন্য ভিসাপ্রাপ্ত ব্যক্তি, বয়স নুন্যতম ২১ এবং লোন ম্যাচুইরিটির সময় সর্বোচ্চ বয়স ৬০ বছর।
- ঋণের পরিমাণ: ১,০০,০০০ থেকে ৫,০০,০০০ টাকা।
- পরিশোধের সময়: ১২ থেকে ৩৬ মাসিক কিস্তি (৬ মাসের গ্রেস পিরিয়ড আছে)।
- জামানত: ঘনিষ্ট জামিনদাতা প্রয়োজন।
এনআরবি ব্যাংক প্রবাসী ঋণের সুবিধা হচ্ছে, সর্বোচ্চ ৬ মাসের গ্রেস পিরিয়ড সুবিধা রয়েছে, যা লোন গ্রহণকারীদের জন্য বড় সুবিধা। আংশিক পরিশোধ বা আগাম পরিশোধের ক্ষেত্রে কোনো অতিরিক্ত চার্জ প্রযোজ্য হবে না।
NRB Bank অফিসিয়াল তথ্য: NRB Bank Retail Loan
৬. পূবালী ব্যাংক প্রবাসী লোন
পূবালী ব্যাংকও প্রবাসীদের জন্য বিশেষ লোন দিয়ে থাকে যার নাম “প্রবাসী নিবাস লোন”। এই লোনটি শুধুমাত্র ফ্ল্যাট/বাড়ি ক্রয়, নির্মাণ, সম্প্রসারণ বা টেকওভার করার জন্য দেয়া হয়।
পূবালী ব্যাংক প্রবাসী লোনের সুদের হার প্রতিযোগিতামূলক এবং আগাম পরিশোধে কোনো অতিরিক্ত চার্জ নেই। তবে লোন প্রসেসিং ফি আছে ০.৩০% থেকে ০.৫০%। আবেদনকারীর বৈধ আয়ের উৎস ও রেমিট্যান্স প্রমাণ থাকতে হবে।
একনজরে পূবালী ব্যাংক প্রবাসী লোন সম্পর্কে তথ্য:
- আবেদনের যোগ্যতা: বিদেশে কর্মরত ক্রেডিটযোগ্য নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশী (NRB) হতে হবে এবং আবেদনকারীর বয়স ২১-৬৫ বছর হতে হবে।
- ঋণের পরিমাণ: নির্মাণ ব্যয়ের সর্বোচ্চ ৭৫% অথবা সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা (যেটি কম)। সেমি পাকা বা টিন শেড বাড়ির ক্ষেত্রে জমির মূল্যের সর্বোচ্চ ৫০% পর্যন্ত লোন দেওয়া হবে।
- পরিশোধের সময়: সর্বোচ্চ ২৫ বছর (১৮ মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ)। আংশিক ও আগাম পরিশোধের সুবিধা রয়েছে।
- জামানত: ঘনিষ্ট জামিনদাতা প্রয়োজন।
৭. ন্যাশনাল ব্যাংক প্রবাসী লোন
ন্যাশনাল ব্যাংকের (NBL Probash Bandhu) হলো নতুন বিদেশগামী প্রবাসী কর্মীদের ভিসা ও ভ্রমণ সংক্রান্ত খরচের জন্য সহজ শর্তের একটি ঋণ সুবিধা, যেখানে সর্বোচ্চ ৩,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ২৪-৩৬ মাসের মেয়াদে ঋণ পাওয়া যায়।
কোনো জামানত ছাড়াই এই ঋণের আবেদন করা যায় এবং সুদের হার SMART+ ৩.৭৫%। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা দিয়ে দ্রুত প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে লোন অনুমোদন দেওয়া হয়।
একনজরে ন্যাশনাল ব্যাংক প্রবাসী লোন
- আবেদনের যোগ্যতা: কাজের ভিসায় বিদেশগামী ব্যক্তি।
- ঋণের পরিমাণ: সর্বোচ্চ ৩,০০,০০০ টাকা।
- সুদের হার: SMART+ ৩.৭৫%।
- পরিশোধের সময়: ২৪ থেকে ৩৬ মাসের মাসিক কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য।
- জামানত: কোন জামানত প্রয়োজন নাই।
শেষ কথা
বিদেশে চাকরির স্বপ্ন পূরণের পথে আর্থিক সহায়তা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। সেই চ্যালেঞ্জ সহজ করতে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক প্রবাসীদের জন্য বিশেষ ঋণ সুবিধা দিয়ে আসছে।
যেসকল ব্যাংক প্রবাসী লোন দেয় তার মধ্যে, সবচেয়ে ভাল ও সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দিচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। অগ্রণী ও সোনালী ব্যাংক মূলত বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি (ভিসা, টিকিট, ট্রেনিং) খরচের জন্য স্বল্পমেয়াদী ঋণ দিয়ে থাকে, যেখানে NRB Bank সহজ শর্তে EMI ভিত্তিক ঋণ সুবিধা প্রদান করে।
অন্যদিকে পূবালী ব্যাংক প্রবাসীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী হোম লোন সুবিধা দিয়ে থাকে, যারা দেশে ফ্ল্যাট বা বাড়ি ক্রয় কিংবা নির্মাণ করতে চান।
তাই, আপনার প্রয়োজন এবং সামর্থ্যের উপর ভিত্তি করে সুবিধাজনক কোন ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি সারতে পারেন।
আমার পরিচিত অনেক মানুষই অভিযোগ করে বলেন যে, অমুক ব্যাংক, তমুক ব্যাংক সব ডকুমেন্ট ও জমির কাগজপত্র দিয়েও লোন পাচ্ছেনা। বিষয়টি আসলেই হতাশাজনক। আপনার অভিজ্ঞতা অবশ্যই আমাদের কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।