অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা করার নিয়ম: সফলতার ৫ ধাপ

অনলাইনে যে কোন ব্যবসা দাঁড় করানো সম্ভব। তবে অনলাইনে ব্যবসা করতে আরও কিছু বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন। জেনে নিন অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করার নিয়ম।

Advertisement

আজকে কথা বলতে যাচ্ছি অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা করার নিয়ম ও ধাপ নিয়ে। বর্তমানে ইন্টারনেটের যুগে চাইলেই ঘরে বসে ব্যবসা করা যায়। আপনি হয়তো প্রায় দেখে থাকবেন ফেসবুক লাইভে জামা-কাপড় প্রোমোট করছে অর্ডার নিচ্ছে। এত ব্যবসায়ী দেখে আসলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা যদি ১৬ কোটি হয়, সেই তুলনায় এসব বিক্রেতার সংখ্যা কিছুই নয়। যদি আপনি ভাল প্রোডাক্ট ভাল মুল্যে দিতে পারেন অবশ্যই আপনি ক্রেতা পাবেন।

এখন আসল কথা হলো, আপনি যদি অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা করতে চান, কিভাবে শুরু করবেন, কোথা থেকে কাপড় সংগ্রহ করবেন এসব জানা দরকার। আসুন এটা নিয়ে বিস্তারিত জানি।

Advertisement

আরও পড়তে পারেন: কাপড়ের ব্যবসা শুরু করার নিয়ম

অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা করার নিয়ম

অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসার করার গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলো হলো:

Advertisement
  • কাপড়ের ধরণ বাছাই
  • ব্যবসার পরিকল্পনা
  • ব্যবসার নাম নির্ধারণ ও ওয়েবসাইট বা পেইজ তৈরি
  • Product প্রস্তুত
  • প্রচার ও মার্কেটিং

১. কাপড়ের ধরণ বাছাই

প্রত্যেকটি পণ্যেরই কিছু টার্গেট ক্রেতা থাকে। কোন ধরণের ক্রেতার জন্য কোন প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করবেন তা মাথায় রেখে উপযুক্ত কাপড় বাছাই করুন।

যেমন হতে পারে আপনি শুধুমাত্র পুরুষের পান্জাবী-পায়জামা এবং ফরমাল শার্ট-প্যান্ট নিয়ে কাজ করতে চান। সব কাস্টমার কিন্তু এই ধরণের পোশাক পড়ে না। তাই এই পোশাকের কাস্টমারদের পছন্দ, রুচি, বাজেট ইত্যাদি বিবেচনা করে আপনার প্রোডাক্ট তৈরী বা সংগ্রহ করতে হবে।

এর পাশাপাশি বর্তমানে ফ্যাশন ট্রেন্ডও আপনাকে বিবেচনায় রাখতে হবে। তাছাড়া ঋতু ও স্থান ভেদে কাপড়ের পছন্দের ভিন্নতা থাকে সেটাও খেয়াল করতে হবে।

আপনি যতটা আপনার কাস্টমার এবং কাস্টমারের পছন্দকে জানবেন, আপনি তত তাদের পছন্দের পণ্যগুলো তৈরি করতে পারবেন। আপনি যেহেতু এটাতে অনেক সময় দিবেন, সেহেতু আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে আপনার কাস্টমারের পছন্দের পণ্য দিতে পারছেন কিনা।

Advertisement

আরও পড়ুন- ১০ হাজার টাকায় ১২ ব্যবসার আইডিয়া

২. ব্যবসার পরিকল্পনা করুন

প্রত্যেক ব্যবসায়ীর ব্যবসায়ে সফল হওয়ার কোন না কোন বিশেষ কৌশল বা Strategy থাকে। যেমন কেউ পন্যের কোয়ালিটি নিয়ে ব্যবসা করে, কেউ একটি বিশেষ শ্রেণির কাস্টমার টার্গেট করে ব্যবসার পরিকল্পনা সাজায়, আবার কেউ বাজারের সবথেকে কম মূল্যে যথাসম্ভব ভাল পন্য দেয়ার কৌশল নিয়ে কাজ করে।

এছাড়াও অনেক ব্যবসায়িক কৌশল থাকতে পারে। অর্থাৎ আপনার পন্য কেন মানুষ কিনবে, আপনি কোন হুকের মাধ্যমে কাস্টমারের কাছে পৌছাবেন তা আপনাকে ঠিক করতে হবে।

এরপর আসবে ব্যবসার প্রতিটি ধাপের জন্য সেই বিষয়ে অভিজ্ঞ, দক্ষ এবং আন্তরিক কাউকে দিয়ে কাজ করাতে হবে। ব্যবসার যে কোন পরিস্থিতিতে আপনাকে দৃঢ় মনোবল রাখতে হবে।

Advertisement

ব্যবসায়ে রিস্ক থাকবেই, ব্যবসায়ে আপনার হার তখনি হবে যখন কোন লোকসানে আপনি ছেড়ে দিবেন। লোকসানকে আপনার বিনিয়োগ ভেবে কাজ করতে হবে। তাহলে, সফলতা আপনি পাবেনই।

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সবসময় একটি বিকল্প চিন্তা করে রাখুন। যাকে আমরা প্রায় Plan B বলে থাকি।

৩. ব্যবসার নাম, ওয়েবসাইট বা পেইজ সেটআপ

এবার আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি ব্র্যান্ড নাম ঠিক করে E Commerce Website বা Facebook Business Page তৈরি করতে হবে।

আপনার যদি অনলাইনে দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবসা করার পরিকল্পনা থাকে এবং ভালভাবে করতে চান, তাহলে আমি পরামর্শ দিব আপনি নিজের একটা E Commerce সাইট খুলে ফেলুন। নিজস্ব সাইট, Facebook উভয় প্ল্যাটফর্মে ব্যবসা করুন।

ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখে, খুব সহজেই WordPress এবং Woocommerce দিয়ে একটি E Commerce সাইট তৈরি করে ফেলতে পারবেন।

যখন আপনার ব্যবসার নিজ ওয়েবসাইট থাকবে, অনলাইনে পন্য ক্রয় করা ও পেমেন্ট করার সুযোগ থাকবে, আপনার ব্যবসার আস্থা ও ব্র্যান্ড ভ্যালু দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।

অথবা, আপনার যদি ই কমার্স সাইটের জন্য ৫-৭ হাজার টাকা বাজেট না থাকে, আপনি শুধুমাত্র একটি ফেসবুক পেইজ খুলেও ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।

৪. পণ্য প্রস্তুত করুন

প্রচলিত আছে যে, “প্রথমে দর্শনধারি পরে গুণ বিচারি”। কোন জিনিস প্রথমে দেখে ভাল না লাগলে সেটা যতই গুনসম্পন্ন হোক না কেন মানুষ তা গ্রহণ করবে না। তাই First Impression গুরুত্বপূর্ণ।

একজন অনলাইন ক্রেতা জানে উপযুক্ত ডিজাইন এবং মানানসই রঙ্গের পণ্য পছন্দ করাটা কতটা ঝামেলার। তাই নিজেকে ক্রেতার আসনে বসিয়ে Product Design করতে হবে।

আপনি নিজে Product Design পছন্দ করতে না জানলে এ ব্যপারে আপনার কোন অভিজ্ঞ বন্ধু বা পরিচিত থাকলে তার সহযোগিতা নিন। যদি নিজেরা ডিজাইন ও সেলাই করেন সেক্ষেত্রে ভাল হবে একজন Professional Designer হায়ার করা। এতে আপনার কাপড়ের ব্যবসা দ্রুত প্রসার হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।

আপনি ডিজাইন পছন্দের জন্য বিভিন্ন সাইটের সাহায্য নিতে পারেন। ডিজাইনের ব্যাপারে আপনি নিজেকে ক্রেতার আসনে বসাবেন ভাল কিন্তু আপনার Target Customer দের ব্যাপারটি মাথায় রাখতে হবে। তাদের পছন্দের ব্যাপারগুলোকে প্রাধান্য দিন।

ডিজাইনের পর আসবে গুনগত মান। কাপড়ের মান অবশ্যই আপনার টার্গেট কাস্টমারের চাহিদাসম্পন্ন হতে হবে। সেলাই ও ফিটিংয়ের ব্যাপারে কোন রকম আপোষ করা যাবে না। আমাদের দেশে কিছু স্থানীয় গার্মেন্টের কাপড়ের কোয়ালিটি যেমনই হোক সেলাই ও ফিটিংয়ের মান মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

৫. প্রচার ও মার্কেটিং করুন

অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসার মূল ভিত্তিগুলোর অন্যতম হচ্ছে প্রচার। আপনার প্রচার যত ভাল আপনি তত তাড়াতাড়ি বিক্রয় বৃদ্ধি করতে পারবেন। সেই সাথে কাস্টমার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে Repeating Customer পেলে আপনার সফলতা ইনশাআল্লাহ নিশ্চিত।

তাই ভাল মানের কাপড় তৈরি করলেই হবে না, অনলাইনে প্রচারের জন্য আপনাকে শুরুতে কিছুটা Investment করতে হবে। প্রচারের জন্য Paid Campaign চালাতে পারেন, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং করতে পারেন। এর পাশাপাশি সব জনপ্রিয় Social Media Platform এ আপনার ব্যবসার উপস্থিতি রাখতে হবে।

Social Media Page তৈরির ক্ষেত্রে নিজে না জানলে দক্ষ কাউকে হায়ার করতে পারেন। আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের Logo, Cover page, Post Image একজন ভাল Graphic Designer দিয়ে পারলে ডিজাইন করিয়ে নিতে পারেন। তা না পারলে Canva থেকে অনলাইনে নিজেই তৈরি করতে পারেন এগুলো।

সোশাল মিডিয়ায় পণ্যের গুণাগুণ ও বৈশিষ্ট্যের ব্যাপারে বিস্তারিত লিখবেন। আপনার পন্যের বিশেষ দিক কোনটি, কেন কাস্টমার এটা কিনে উপকৃত হবে এসব বিষয় হাইলাইট করবেন। এর সাথে পন্যের ভাল ছবি শেয়ার করবেন।

শেষকথা

অনলাইনে ব্যবসা করার জন্য ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী দ্রুততম সময়ের মধ্যে ডেলিভারী, কাস্টমারদের সন্তুষ্টি এবং যে কোন ইস্যু দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করতে হবে।

আপনার সাধারণ ব্যবসার দক্ষতার পাশাপাশি অনলাইনে কাস্টমার রিচ করা, সম্ভাব্য ক্রেতাদের সাথে ভালভাবে ডিল করার দক্ষতাও থাকতে হবে। যে কোন ব্যবসাতেই কাস্টমার সন্তুষ্ঠিকে প্রাধান্য দিতে হয়। অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রেও এটি ভিন্ন নয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *