ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি ও কুফল কি

আপনি কি জানেন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করলে তার পরিণিতি ভয়াবহ? জানুন ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি ও কুফল কি।

ব্যাংক ঋণ
Advertisement

ব্যাংক ঋণ নেওয়ার পর তা পরিশোধ না করা হলে বা পরিশোধ না করতে পারলে চুক্তিপত্র ও শর্তাবলী অনুসারে বিভিন্ন ধরণের কুফল ও শাস্তি রয়েছে। এই ব্লগে আলোচনা করবো, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করলে শাস্তি কি এবং আর কি কুফল রয়েছে।

ব্যক্তিগত, পারিবারিক অথবা ব্যবসায়িক কারণে আমরা প্রায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। বর্তমানে ব্যাংক ঋনের শর্ত ও প্রক্রিয়া সহজ করার কারণে ঋণ নেয়া অনেকটাই সহজ। কিন্তু ঋণ নিয়ে সময়মত পরিশোধ না করলে তার ফলাফল অনেক কঠিন।

আসুন জানি সময়মত ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করলে তার শাস্তি বা ফলাফল কি।

ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি

ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি হতে পারে, জামানতের সম্পত্তি নিলাম হয়ে যাওয়া, বা নিশ্চয়তাদানকারীর সম্পত্তি জব্দ করা, কোর্টে মামলা দায়ের ইত্যাদি। সময়মত ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করলে ঋণগ্রহীতার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়।

তাছাড়া সময়মত ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলে প্রকৃত সুদের হার বেশি হওয়া ও ক্রেডিট স্কোরের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

আরও পড়ুন: ব্যাংকে টাকা রাখা কি হারাম

ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি গুলো হলো:

Advertisement

১. বিলম্ব ফি বা জরিমানা

ব্যাংক ঋণ পরিশোধের সময়সূচী অনুযায়ী অর্থ প্রদানে বিলম্ব হলে অথবা ব্যর্থ হলে সাধারণত ব্যাংক থেকে বিলম্ব ফি অথবা জরিমানা ধরা হয়। বিলম্ব ফি বা জরিমানা বকেয়া অর্থের সাথে যুক্ত করা হয় এবং এর ফলে বকেয়া ঋণের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পায়।

২. প্রকৃত সুদের হার বৃদ্ধি

ঋণের কিস্তি পরিশোধে বিলম্ব করলে, অতিরিক্ত সময়ের জন্য সুদের পরিমাণ বেড়ে যায়। যার ফলে, আপনার ঋণের প্রকৃত সুদের পরিমাণ অনেক বেড়ে যেতে পারে।

আরও পড়ুন: ব্যাংক ঋণ নেয়ার আগে আপনার যা জানা উচিত

৩. ক্রেডিট স্কোর এর উপর নেতিবাচক প্রভাব

সময়মত ঋণ পরিশোধ না করতে পারলে তা ব্যাংকের ক্রেডিট স্কোর এর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

Advertisement

ক্রেডিট স্কোরের এ ধরনের নেতিবাচক রিপোর্ট ব্যাংকে জমা থাকে যা ভবিষ্যতে ঋণগ্রহীতার ক্রেডিট পাওয়ার ক্ষমতাকে বা পুনরায় ঋণ নেওয়ার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে।

৪. ব্যাংকের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ

ঋণ পরিশোধের সময়সীমার মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে ব্যার্থ হলে। ঋণগ্রহীতাকে প্রথমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নোটিশ দেয়া হবে। নোটিশে দেয়া সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে, ঋণগ্রহীতার বিরুদ্ধে ব্যাংক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

Advertisement

বকেয়া ঋণ পুনরুদ্ধার করতে ব্যাংক ঋণগ্রহীতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারে এবং আদালত ব্যাংকের পক্ষে রায় দিলে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বৃদ্ধির সাথে সাথে বিভিন্ন আইনি জরিমানা সম্মুখীন হতে পারে।

৫. সম্পদ জব্দ করা

কিছু কিছু ঋণের ক্ষেত্রে যেগুলোতে জামানত জড়িত থাকে, ব্যাংক গুলোর বকেয়া অর্থ পুনরুদ্ধার করার জন্য ঋণগ্রহীতার বন্দক কৃত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও বিক্রি করার অধিকার থাকে।

ঋণের আবেদনের জামানত হিসেবে ব্যবহৃত ঋণগ্রহীতার সম্পত্তি, যানবাহন বা অন্যান্য সম্পদ ব্যাংক জব্দ করতে বা বাজেয়াপ্ত করতে বা বিক্রি করতে পারে।

এছাড়া ব্যাংকের শর্তাবলী অনুসারে বিভিন্ন ব্যাংকে শাস্তির পরিমাণ ও শাস্তির ধরন বিভিন্ন রকম হতে পারে।

মৃত ব্যক্তির ব্যাংক ঋণ পরিশোধ

কোন ব্যক্তি যদি ঋণ পরিশোধ না করে মৃত্যুবরণ করে এবং তার ওয়ারিশরাও যদি তার ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয় বা না করে তাহলে কেয়ামতের ময়দানে মৃত ব্যক্তির নেক আমল দ্বারা এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

তবে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে কোন ইন্সুরেন্স কোম্পানি বা গ্যারান্টার যুক্ত থাকলে তাদের থেকে অর্থ আদায় করে, ডিপোজিট বা সিকিউরিটি থাকলে তা থেকে ঋণ আদায় করে, ঋণ চুক্তিতে উত্তরাধিকারী যদি কোনভাবে যুক্ত থাকে তাহলে তার সম্পত্তিকে এই দিন আদায় করা হয়।

মৃত ব্যক্তির ঋণ যেভাবে ব্যাংক পরিশোধ করে থাকে তা হলো:

  • ঋণের আবেদনের সময় যদি কোন ইন্সুরেন্স কোম্পানি বা গ্যারান্টার চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকে তাহলে ব্যক্তির মৃত্যুর পর ব্যাংক উক্ত ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি বা গ্যারান্টার থেকে ঋণ আদায় করে।
  • মৃত ব্যক্তির যদি কোন সিকিউরিটি ব্যালেন্স ব্যাংকে যুক্ত থাকে তাহলে সেখান থেকে তার ঋণ পরিশোধ করা হয়ে থাকে।
  • ব্যাংকে যদি মৃত ব্যক্তির কোন ডিপোজিট বা সঞ্চয়ী একাউন্ট থাকে তবে তার ব্যালেন্স থেকে ঋণ পরিশোধ করা হয়ে থাকে।
  • ঋণ আবেদনের ক্ষেত্রে চুক্তিপত্রের যদি ব্যক্তির ওয়ারিশগণের নাম উল্লেখ থাকে বা ওয়ারিশগণ যদি ঋণের সাথে যুক্ত থাকে তবে তাদের সম্পদ থেকে এই ঋণ পরিশোধ করা হয়।

মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ

মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ প্রসঙ্গে মহানবী (সাঃ) বলেছেন,

কেউ ঋণগ্রস্ত অবস্থায় মারা গেলে (কেয়ামতের দিন) তার ঋণ পরিশোধ করার জন্য কোন দিনার বা দিরহাম (টাকা-পয়সা) থাকবে না; বরং পাপ ও নেকী অবশিষ্ট থাকবে। ( মুসতাদরাক হাকেম, হাদিস : ২২২২)

অন্য এক হাদীসে আছে মহানবী (সাঃ) বলেছেন,

শহীদ ব্যক্তির সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে;কিন্তু ঋণ ছাড়া। ( মুসলিম, হাদিস: ১৮৮৬)

জানাজা পড়তেন না আমাদের মহানবী মুহাম্মদ (সাঃ) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জানাজা পড়তেন না।

ঋণ বান্দর হক; ঋণের পাপ আল্লাহ তালা ক্ষমা করেন না। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির মৃত্যু যদি ঋণ পরিশোধের পূর্বে হয়ে থাকে এবং তার ওয়ারিশরা যদি এ ঋণ পরিশোধ না করে তবে মৃত ব্যক্তির আত্মা ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে।

তাই মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধের জন্য তিনটি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে:

  • জমাকৃত সম্পদ থেকে সর্বপ্রথম তার দাফন কাফনের ব্যবস্থা করতে হবে;
  • এরপর তার দুনিয়ায় করা ঋণ পরিশোধ করতে হবে যা মোট সম্পদের ১/৩ অংশের বেশী হবে না;
  • অবশিষ্ট সম্পদ ওয়ারিশদের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে দিতে হবে;

এভাবেই মৃত ব্যক্তির জমাকৃত সম্পদ এবং ওয়ারিশগণের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির ব্যাংক লোন অথবা যেকোনো ধরনের ঋণ পরিশোধ করা হয়ে থাকে।

ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করার নিয়ম

বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ পরিশোধের নিয়ম গুলো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারা নির্ধারিত নির্দেশিকা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।

সময়সূচী অনুযায়ী অর্থ প্রদান করা, নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে কিস্তি প্রদান করা, প্রতিমাসে কিস্তির সাথে সুদ ও মূল টাকা পরিশোধ করা, সময়সূচি অনুযায়ী ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে ব্যাংকের পদক্ষেপ ইত্যাদি ঋণ পরিশোধের নিয়ম গুলো জেনে নিতে হবে।

বিভিন্ন ব্যাংক ভেদে ঋণ পরিশোধের শর্তাবলী গুলো ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।

চলুন ব্যাংক ঋণ পরিশোধের নিয়ম হচ্ছে:

  • ঋণ পরিশোধসূচী অনুযায়ী সঠিক সময়ে কিস্তি পরিশোধন করতে হবে। সাধারণত ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে মাসিক কিস্তি নির্ধারণ করা হয়।
  • বিলম্ব ফি বা জরিমানা এড়াতে অবশ্যই কিস্তির টাকা ব্যাংক থেকে নির্ধারিত তারিখের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। 
  • সুদের হার এবং বকেয়া ব্যালেন্স এর উপর নির্ভর করে সুদ নির্ধারিত হয় যা প্রতি মাসে কিস্তির টাকার সাথে দিয়ে দিতে হয়।
  • প্রতি মাসের কিস্তির টাকার মধ্যে মূল এবং সুদ উভয় অংশই থাকে যার পরিমাণ অর্থ প্রদানের সাথে সাথে হ্রাস পায়।
  • ঋণ পরিশোধের সময়সূচির মধ্যে কেউ ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে এর ফলে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ, সুদের হার, ক্রেডিট স্কোর ইত্যাদির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
  • বকেয়া অর্থ পুনরুদ্ধারের জন্য ব্যাংকগুলো আইনি পদক্ষেপ সহ বিভিন্ন গুরুতর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।

এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকের শর্তাবলী অনুসারে ঋণ পরিশোধের নিয়ম নির্দেশনা গুলো ভিন্ন ভিন্ন এবং আরও বেশি হতে পারে।

শেষ কথা

বাংলাদেশের ব্যাংক গুলোতে ঋণ পরিশোধের বিষয়টি খুব গুরুত্ব সহকারে দেখা হয় এবং ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি ও হয়ে থাকে।

তাই ঋণের আবেদনের সময় সময়সূচী সহ সকল ধরনের তথ্য জেনে এবং নিশ্চিত হয়ে সময়মতো ঋণ পরিশোধ করা অত্যাবশ্যক।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *