মেয়েদের ব্যবসার ১০ আইডিয়া | মহিলাদের জন্য ঘরে বসে ব্যবসা

ঘরে বসেই ব্যবসা করতে চান? জানুন ঘরে বসে মেয়েদের ব্যবসার সেরা আইডিয়া এবং কিভাবে শুরু করবেন বিস্তারিত।

Advertisement

বর্তমান প্রতিযোগীতামূলক সময়ে কেউ শুধু শুধু ঘরে বসে থাকে না, থাকতে চায় না। এখনকার নারীরাও তাই সমানতালে কাজে অংশ নিতে চায়। আজকের নারীরা ঘরে বাইরে সর্বত্রই কাজ করে। তবে সবার পক্ষে সব সময় ঘরের বাইরে গিয়ে কাজ করা সম্ভব হয় না।

তাই দরকার এমন কিছু কাজ যা ঘরে বসেই অনায়াসে করা সম্ভব। সে দিক বিবেচনায় চাকরির চেয়ে ব্যবসা করা মেয়েদের জন্য উপযোগী। আর এখন ঘরে বসে মেয়েদের অনলাইন ব্যবসা করা খুবই সহজ।

এখানে আমি শেয়ার করবো এমন ১০ টি মেয়েদের ব্যবসার আইডিয়া যা আপনি বাড়িতে বসে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।

Advertisement

আরও পড়ুন- ঘরে বসে প্যাসিভ ইনকাম করুন

মেয়েদের ব্যবসার আইডিয়া

১. অনলাইন ফুড বিজনেস

মেয়েদের ব্যবসার আইডিয়া হলো অনলাইন ফুড বিজনেস। আপনি ঘরে খাবার তৈরি করে স্থানীয় কাস্টমারের কাছে বিক্রয় করতে পারেন। ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে সহজেই অনলাইন ফুড বিজনেস চালু করতে পারেন।

Advertisement

অনলাইন ফুড বিজনেস টা এখন ঘরোয়া ব্যবসা হিসেবে বিপুল জনপ্রিয়। দুই তিন বছর আগেও এটা এতটা জনপ্রিয় ছিল না। ব্যস্ততার এই যুগে নারী পুরুষ সবাই বাইরে কাজ করে। এখন অনেকে মেয়েরাই ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসা করছে।

ঘরে ফিরে ক্লান্তিতে আর রান্নার কাজে যেতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু খাবার খাওয়ার সময় চাই ঘরোয়া স্বাদ। আর রেস্টুরেন্টের খাবারে সবাই অভ্যস্ত নয়। তাই এই স্বাদটুকু পেতে সাহায্য করতে পারেন আপনি।

আর এর সাথেই শুরু হয়ে যাবে আপনার অনলাইন বিজনেস। আপনিও উপকৃত হবেন, আর্থিক ইনকাম হবে আর সবাই পারে খাবারের ঘরোয়া স্বাদ। নির্ধারিত সময়ে খাবার রান্না করে পৌঁছে দিবেন তাদের ঠিকানায়।

ঘরে খাবার তৈরি করে অনলাইনে বিক্রয় করার অ্যাপসমূহ

এই খাবারের মধ্যে থাকতে পারে নানা রকম আইটেম। আপনি যে আইটেম খুব ভালো বানাতে পারেন সেটা নিয়েই কাজ করতে হবে। যেমন: রান্না ভালো পারলে রান্নার যাবতীয় আইটেম নিয়ে কাজ করতে পারেন বা ফ্রোজেন আইটেম নিয়ে কাজ করতে পারেন। আচার, বাটার, ঘি, বিভিন্ন পিঠা ইত্যাদি সবই থাকতে পারে ফুড বিজনেস এর আওতায়।

Advertisement

এ ব্যবসাটি জনপ্রিয় হওয়ার কারণে এর প্রতিযোগিতা বর্তমানে অনেক বেশি। তাই অনলাইন ফুড বিজনেস করতে হলে, ইউনিক কিছু করতে হবে। এছাড়া আপনাকে সব কিছু দক্ষ, প্রফেশনাল আর আন্তরিকভাবে করতে হবে। তাহলে নিশ্চিত গ্রো করতে পারবেন।

২. ব্লগিং

ব্লগিং হচ্ছে মানুষ অনলাইনে সার্চ করে এমন কোন বিষয়ে লেখালেখি করা। বর্তমানে মানুষ অনেক সমস্যা নিয়ে অনলাইনে সার্চ করছে। সেইসব বিষয়ে যদি আপনার ভাল জানাশোনা ও আগ্রহ থাকে আপনি এসব বিষয়ে কনটেন্ট লিখে তথ্য শেয়ার করতে পারেন ব্লগের মাধ্যমে।

যখন আপনার ব্লগে অনেক ভিজিটর আসবে, আপনি ব্লগে গুগল অ্যাডসেন্সের মাধ্য বিজ্ঞাপন দেখানো, এফিলিয়েট মার্কেটিং, স্পন্সরড কনটেন্ট, প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সেল করার মাধ্যমে আয় করতে পারবেন।

এখন হয়তো মনে প্রশ্ন আসবে ব্লগিং করে কত টাকা আয় করা যায়। ব্লগিং থেকে আপনি আনলিমিডেট আয় করতে পারবেন।

Advertisement

ব্লগিং থেকে কম করে হলেও ১৫-২০ উপায়ে আয় করা যায়। আপনি চাইলে একই ব্লগ থেকে সব উপায়ে আয় করতে পারেন। ব্লগিংয়ের সবচেয়ে সুবিধা হলো এটি আপনি পার্ট টাইম ব্যবসা হিসেবে নিতে পারেন।

কিভাবে ব্লগিং শুরু করবেন

প্রথমে ব্লগিংয়ের জন্য কোন একটি টপিক বাছাই করতে হবে। এবার টপিক অনুসারে পছন্দ মত একটি ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করুন। Google এর ফ্রি Blogger.com বা Hosting ক্রয় করে WordPress এর মাধ্যমে খুব সহজেই একটি ব্লগ তৈরি করতে পারেন।

ব্লগ শুরু করতে চাইলে কিভাবে করবেন তার পুরোপুরি একটি গাইডলাইন পড়ুন এখানে- কিভাবে ব্লগিং শুরু করব

৩. ফ্যাশন ডিজাইনিং বা বুটিক শপ

প্রতিযোগীতার এই যুগে চাকরি পাওয়া কঠিন। তাই আপনি যদি হয়ে থাকেন ফ্যাশন ডিজাইনার বা পোশাক সম্পর্কে যদি থাকে ভালো জ্ঞান তাহলে ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন। আর তৈরি করে নিতে পারেন আপনার বুটিক শপ।

বিভিন্ন ফ্যাশনেবল পোশাকের সাথে আপনি আপনার শপে রাখতে পারেন বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজের ড্রেস, হ্যান্ড পেইন্ট ড্রেস, শাড়ি, পান্জাবি, ব্লক বাটিক ড্রেস। এছাড়া রাখতে পারেন কাস্টমাইজ ড্রেস তৈরির সুবিধা।

৪. বেকারি বিজনেস

বেকারি আইটেম এর মধ্যে সবচেয়ে প্রথমে মাথায় আসে কেক। কেক এখন আর শুধু জন্মদিনের অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ নেই। তাই আপনি যদি ভালো কেক বানাতে পারেন তাহলে এটা হতে পারে লাভজনক ব্যবসা। এখন মানুষ বিভিন্ন থিম কেক পছন্দ করে। গায়ে হলুদ, বিয়ে, জন্মদিন, বৌভাত, বিবাহ বার্ষিকী ইত্যাদি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন থিমের কেক বিপুল জনপ্রিয়।

কাস্টমার এর চাহিদা অনুযায়ী এসব কেক তৈরি হয়। ভেজালের ভিড়ে আজকার অনেকেই বাজার থেকে এসব কেক কিনতে চায়না। চায় ঘরে তৈরি কেক আর সেই দিকটা খেয়াল করে আপনি তৈরি করে দিতে পারেন তাদের পছন্দমত কেক।

৫. ইউটিউব

ইউটিউব থেকে আয় অনেকাংশে পপুলার। আপনি আপনার তৈরিকৃত বিভিন্ন ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করবেন। আপনার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার যখন ১০০০ এর বেশি হয়ে যাবে এবং গত ১২ মাসে ৪০০০ ঘন্টা ভিডিও ওয়াচ টাইম হবে, আপনি ইউটিউবে মনিটাইজেশন এর আবেদন করবেন। সবকিছু ঠিক থাকলে গুগল থেকে আপনাকে পারমিশন দেয়া হবে।

মনিটাইজেশন অনুমোদন পেলে আপনার ভিডিওর সাথে গুগল থেকে বিভিন্ন এড দেখানো হবে আর আপনি তার জন্য টাকা পাবেন। ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে টাকা ইনকাম এখন বহুলাংশে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

৬. বিউটি পার্লার

সাজগোজের প্রতি আকর্ষণ কমবেশি সবারই আছে। তাইতো পাড়ায় মহল্লায় দেখা যায় বিভিন্ন বিউটি পার্লার। এসবের সবার যে খুব ভালো প্রশিক্ষণ আছে তা কিন্তু নয়। তাই আপনার যদি এ বিষয়ে থাকে বিশদ জ্ঞান তাহলে আপনিও শুরু করতে পারেন বিউটি পার্লার ব্যবসা। তাছাড়া এখন অনলাইনে সেবা পেতে অনেক মানুষই পছন্দ করে।

আপনার বাসস্থানের কাছাকাছি এলাকাগুলোতে আপনি বাসায় গিয়ে সাজানোর ব্যবস্থা রাখতে পারেন। এতে অফলাইন ও অনলাইন দুই উপায়েই আয় হতে পারে।

৭. চাইল্ড কেয়ার

ব্যস্ততার এই যুগে বাবা মা দুইজনেই বাইরে চাকরি করে। তাই ঘরের ছোট শিশুটিকে নিয়ে থাকে দুশ্চিন্তা। অনেকেই বাসার কাজের সহকারি মেয়েটির কাছে বাচ্চাকে রেখে যেতে চায় না। দিন দিন শুধু ব্যস্ততা বাড়ছে। তাই চাইল্ড কেয়ার বিজনেসটি হতে পারে লাভজনক ব্যবসা।

যেসব বাবা মা সারাদিন বাইরে কাজ করে তাদের সন্তানদের দেখাশোনা করার গুরুদায়িত্বটি আপনি পালন করতে পারেন। এতে সন্তান ও মায়ের আদর পাবে আর বাবা মা ও থাকবে চিন্তামুক্ত।

৮. অনলাইনে প্রশিক্ষণ বা শিক্ষকতা

বছর দুই আগেও অনলাইনে কোনো প্রশিক্ষণ নেয়া বা টিউশন করা ছিল চিন্তার বাইরে। কিন্তু ব্যস্ততার এই যুগে সব সময় যেমন বাইরে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেয়া সম্ভব হয় না তেমনি অনেক ক্ষেত্রে সময় স্বল্পতার অভাবে পছন্দের শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়াও সম্ভব হয় না। এদিক বিবেচনায় অনলাইনে শিক্ষকতা বা প্রশিক্ষণ অনেকটাই গ্রহণযোগ্য।

আজকাল অনলাইনে বিভিন্ন কোর্স কিনতে পাওয়া যায়। নির্ধারিত ফি এর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রশিক্ষক ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে বিভিন্ন প্রশিক্ষন দিয়ে থাকেন।

আপনি যে বিষয়ে পারদর্শী যেমন রান্না, সেলাই, বেকিং, হাতের কাজ, পেইন্টিং ইত্যাদি এসব বিষয়ের উপর বিশদ ভাবে কয়েকটা ক্লাসের মাধ্যমে এক একটা কোর্স তৈরি করতে পারেন। এতে নতুন যারা তারাও উপকৃত হবে আর আপনার ও ইনকাম হবে।

আবার এখন কিন্তু অনলাইনে টিউশন ও ব্যাপক জনপ্রিয়। অনেক সময় দেখা যায় সময় স্বল্পতার কারণে আপনি কোন ছাত্রছাত্রীকে পড়াতে পারছেন না। আবার দেখা যায় বাচ্চার বাবা মা সময় করতে পারছেনা তাই নিয়েও আসতে পারছে না।

এ সমস্যা কিন্তু এখন আর দেখা যায় না। বাসায় গিয়ে না পড়াতে পারলেও অনলাইনে ঠিকই এখন পড়ানো যায়। প্রযুক্তি এখন এ সমস্যা একদম নির্মুল করে দিয়েছে।

৯. সেলাই ব্যবসা

জামা কাপড় তৈরি করতে দর্জির কাছে দৌড়ানো কতটা বিরক্তিকর তা মেয়েরা বেশি জানে। এজন্য এখন অনেকেই রেডিমেড জামা খুজে বেড়ায়। জামা কাপড় সেলাই করার এ সমস্যাটা আপনি দূর করে দিতে পারেন আপনার সেলাই ব্যবসা শুরু করার মাধ্যমে। অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইন টেইলরিং ও এখন অনেক জনপ্রিয়।

আর এ ব্যবসা শুরু করতে খুব বেশি পুঁজির ও দরকার হয়না। শুধু একটা ভালো সেলাই মেশিন থাকলেই হয়। সেলাই ব্যবসার পাশাপাশি আপনি আপনার স্টকে কিছু থ্রি পিছ বা গজ কাপড়ও রাখতে পারেন। এতে করে যারা আপনাকে সেলাই করার জন্য অর্ডার দিবে তাদের প্রয়োজনে আপনার কাছ থেকেই কাপড় টি কিনে নিতে পারবে।

১০. ফ্রিল্যান্সিং

ফ্রিল্যান্সিং পেশাকে এখন অনেকেই পছন্দ করে। এখানে নিজের স্বাধীনমত কাজ করা যায় বলে এটা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। যে কোন ধরণের স্কিল থাকলেই আপনি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ও ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস থেকে কাজ সংগ্রহ করতে পারবেন।

একদম এক্সপার্ট না হলে এখন মার্কেটপ্লেস থেকে কাজ নেওয়া যায় না। তাই প্রথম দিকে স্থানীয় ও দেশীয় ক্লায়েন্টদের কাজ খুঁজে নিতে পারেন। মোটামুটি এক্সপার্ট হলে মার্কেটপ্লেস যেমন, Upwork.com, Freelancer.com, Fiverr.com এগুলোতে যোগ দিতে পারবেন।

FAQs

কিভাবে ঘরে বসে ব্যবসা শুরু করতে পারেন?

ঘরে বসে ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রথমদিকে একটি Facebook Business Page চালু করে ব্যবসার প্রচার ও কার্যক্রম চালাতে পারবেন। কাস্টমারের সাথে যোগাযোগ ও অর্ডার রিসিভ করতে এটি সাহায্য করবে।

ঘরে বসে মহিলারা কি কি ব্যবসা করতে পারে?

ঘরে বসে মহিলারা ব্লগিং, ফ্রিল্যান্সিং, ইউটিউব, অনলাইনে শিক্ষকতা, অনলাইন ফুড বিজনেস, সেলাই ব্যবসা সহজেই শুরু করতে পারেন।

শেষকথা

উপরোক্ত আইডিয়াগুলোর মধ্যে যেটা আপনার জন্য বিশেষ উপযোগী সে ক্ষেত্র নিয়ে কাজ শুরু করা উচিত। তবে মনে রাখতে হবে যে কোনো ব্যবসার জন্য প্রচার বিশেষ উপযোগী। প্রচার না করলে ব্যবসার প্রসারতা আসবেনা। তাই ব্যবসা শুরুর পাশাপাশি অবশ্যই তার প্রচারেও মনোযোগী হতে হবে।

এসব ব্যবসাগুলো শুরু করতে প্রথম দিকে একটি ফেসবুক বিজনেস পেইজ তৈরি করেই আপনার ব্যবসার প্রচার ও কার্যক্রম চালাতে পারবেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *