৩০ হাজার টাকায় ১০ ব্যবসার আইডিয়া
বর্তমানে প্রযুক্তি ও অনলাইনের যুগে ব্যবসা করতে টাকা নয় একটি ভাল আইডিয়া গুরুত্বপূর্ণ। জেনে নিন ৩০ হাজার টাকায় ১০ টি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া।
ব্যবসা হলো একটি মুক্ত পেশা যা নিজের মতো করে পরিচালনা করা যায় এবং বেশিরভাগ মানুষই ব্যবসা করার ক্ষেত্রে আগ্রহী হয়ে থাকে। অনেক কম পুঁজি নিয়ে যেমন ব্যবসা শুরু করা যায় তেমনি অনেক বেশি পুঁজি নিয়েও ব্যবসা শুরু করা যায়।
তবে ব্যবসা করার কৌশল জানা থাকলে যেকোনো পরিমাণ পুঁজি দিয়েই ব্যবসায় সফলতা আনা সম্ভব। চলুন ৩০ হাজার টাকায় শুরু করা যায় এমন ১০টি ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে জানা যাক।
৩০ হাজার টাকায় ব্যবসার আইডিয়া
বর্তমানে ৩০ হাজার টাকায় আপনি মোবাইল সার্ভিসিং ও এক্সেসরিজের ব্যবসা, অনলাইন ফুড ডেলিভারি, কনটেন্ট তৈরি, Digital Service, Online Tutoring ইত্যাদি ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এসব ব্যবসার বর্তমানে অনেক চাহিদা রয়েছে, এবং এসব ব্যবসার Profit Margin অনেক বেশি।
আসুন ত্রিশ হাজার টাকায় শুরু করা যাবে এমন কিছু ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
১. মোবাইল সার্ভিসিং স্টোর
মোবাইলের বিভিন্ন ধরনের সার্ভিসিং করা বা মোবাইলের বিভিন্ন জটিলতা দূর করার কাজ জানা থাকলে আপনি একটি মোবাইল সার্ভিসিং স্টোর এর ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
এটি শুরু করতে যা যা লাগবে তা হলো –
- প্রায় ৩০ হাজার টাকার মূলধন
- মোবাইলের বিভিন্ন সার্ভিসিং যন্ত্র
- মোবাইলের বিভিন্ন এক্সেসরিজ
- একটি দোকান বা অনলাইন পেইজ
- মোবাইল সার্ভিসিং এর দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা
৩০ হাজার টাকার এই ব্যবসা করে মাসে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।
এছাড়া আপনি মোবাইলের বিভিন্ন এক্সেসরিজ যেমন- কেস, স্ক্রিন, প্রোটেক্টর, চার্জার, হেডফোন ইত্যাদি জিনিস দিয়ে ছোট একটি মোবাইল সার্ভিসিং এর দোকান শুরু করতে পারেন।
২. অনলাইন ফুড ডেলিভারি
আজকাল অনলাইনে খাবার অর্ডার করার দিকে মানুষের আগ্রহ বেড়েই চলছে। অফিসের কর্মী বা শিক্ষার্থী যাদের নিজেদের খাবার রান্না করার সময় নেই তাদের জন্য ঘরে খাবার তৈরি করে তা অনলাইনের মাধ্যমে ডেলিভারি করে ভালো আয় করা সম্ভব।
এ ব্যবসার সবচেয়ে সুবিধা হচ্ছে ঘরে বসেই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
এক্ষেত্রে শুরু করতে যা যা লাগবে:
- স্বাস্থ্যসম্মত এবং মজাদার খাবার রান্না করার দক্ষতা;
- খাবার তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ;
- খাবার ডেলিভারি করার জন্য ফয়েল বক্স;
- একজন ডেলিভারি ম্যান।
আপনি নিজে অনলাইনে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে একটি পেইজ খুলে তাতে আপনার বানানো খাবারের প্রচারণা করে অনলাইনে ফুড ডেলিভারির ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
৩. কনটেন্ট ক্রিয়েশন ও ডিজিটাল সার্ভিস
বর্তমানে কনটেন্ট ক্রিয়েশন একটি অন্যতম ভাল আয়ের সুযোগ। আপনি চাইলে একটি ব্লগ তৈরি করে যে কোন বিষয়ে লেখালেখিও করতে পারেন। YouTube চ্যানেল বা Facebook এ ভিডিও কনটেন্ট শেয়ার করেও আয় করতে পারেন। তাছাড়া, বিভিন্ন ব্লগ, ইউটিউব চ্যানেলের জন্য কনটেন্ট রাইটিং বা ভিডিও এডিটিং সেবা দিয়েও আয় করতে পারেন।
Freelancing অথবা Agency এর মাধ্যমে অনলাইনে বিভিন্ন ডিজিটাল সার্ভিস দিয়েও আয় করতে পারেন। তবে এজন্য প্রচুর চাহিদা আছে এমন কোন Skill থাকতে হবে। বর্তমানে খুব চাহিদা রয়েছে এমন কিছু Skills হচ্ছে:
- Content Writing;
- Video Content Creation
- Video Editing;
- Search Engine Optimization;
- Graphic Design ইত্যাদি।
এজন্য শুরুতে নিজেই একটি Digital Service Agency চালু করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। তবে শুরুতেই নিজের এজেন্সি করতে কমপক্ষে ২/৩ জনের হলেও একটি Team তৈরি করতে হবে। কারণ সব কিছু নিজে একা একা করতে পারবেন না।
৪. স্টেশনারি পন্যের ব্যবসা
স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রী দের জন্য বই, খাতা, কলম, কাগজ বা অফিসের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের মৌলিক প্রয়োজনীয় সামগ্রী ইত্যাদি নিয়ে আপনি একটি স্টেশনারি দোকান এর ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
এই ব্যবসা শুরু করার জন্য যা যা লাগবে-
- স্কুল, কলেজের আশেপাশে একটি দোকান
- ছাত্র ছাত্রীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র যেমন- বই, খাতা, কলম, কাগজ, পেন্সিল বক্স ইত্যাদি।
- বিভিন্ন ধরনের বইয়ের কালেকশন
আপনার স্টেশনারি দোকানে আপনি একটি প্রিন্টার ও কম্পিউটারও রাখতে পারেন।
স্টেশনারি দোকানের ব্যবসা শুরু করে মাসে ২০-৩০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।
৫. কোচিং সেন্টার টিউটরিং
স্কুল বা কলেজের ছাত্র ছাত্রী যাদের অতিরিক্ত একাডেমিক পড়ালেখায় সহায়তার প্রয়োজন হয় তাদের টিউটরিং করিয়ে একটি ভালো ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।
আপনি যেসকল বিষয়ে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ সেইসকল বিষয়ে অনলাইনে বা অফলাইনে হোম টিউটরিং করে বা একটি কোচিং সেন্টার খুলে আয় করা যায়।
এই ব্যবসা শুরু করার জন্য যা যা লাগবে:
- শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার জন্য একটি ভালো পরিবেশের জায়গা যেখানে কোচিং সেন্টার খোলা যাবে।
- শিক্ষার্থীদের জন্য বেঞ্চ, টেবিল, বোর্ড ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিস
- পর্যাপ্ত পরিমান দক্ষ শিক্ষক
এভাবে একটি কোচিং সেন্টার খুলে বা হোম টিউটরিং করে মাসে হাজার হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।
৬. নার্সারির ব্যবসা
আপনি একটি ছোট গাছের নার্সারির ব্যবসা শুরু করতে পারেন যেখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের দেশ বিদেশী ফুল, ফল এবং সৌন্দর্যবর্ধক গাছ বিক্রির জন্য রাখতে পারেন।
বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ বা ঘরের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহার করা হয় যেমন ক্যাকটাস, পাতাবাহার ইত্যাদি ধরনের জনপ্রিয় গাছের চারা দিয়ে একটি সুন্দর নার্সারি খুলে ফেলতে পারেন।
এ ধরনের ব্যবসা শুরু করতে যা যা লাগবে:
- একটি পরিষ্কার বড় ও গাছ রাখার জন্য উপযুক্ত জায়গা;
- বিভিন্ন ধরনের ফুল, ফল ও, সৌন্দর্যবর্ধক গাছের চারা;
- গাছের পরিচর্যার জন্য বিভিন্ন সার ও কীটনাশক;
- বিভিন্ন ধরনের টবের কালেকশন।
সৌন্দর্য এবং সবুজের সমারহ বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের অন্দর ও বহিরাঙ্গন এর গাছের চারা বিক্রি করে মাসে হাজার হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।
৭. হস্তশিল্পের ব্যবসা
আপনার যদি বিভিন্ন ধরনের গয়না, হাতের চুরি, কাঠের গয়না ইত্যাদি হাতে তৈরি করার দক্ষতা থাকে তাহলে আপনি একটি হস্তশিল্পের ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
আজকাল অনলাইনে এই ধরনের হাতে তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা অনেক বেশি এবং এগুলো অনেক বেশি বিক্রি হয়।
হস্তশিল্পের ব্যবসা শুরু করার জন্য যা যা লাগবে-
- একটি অনলাইন পেইজ বা অফলাইন দোকান
- বিভিন্ন গহনা তৈরির উপকরণ
- হস্তশিল্পের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা
যেহেতু হস্তশিল্প আজকাল খুব বেশি জনপ্রিয় তাই এই ব্যবসা শুরু করে অধিক লাভ করার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
৮. পোশাক লন্ড্রির দোকান
৩০ হাজার টাকা মূলধন দিয়ে একটি পোশাক লন্ড্রির দোকান খুলে দক্ষতার সাথে কাজ করলে মাসে অনেক টাকা আয় করা সম্ভব।
পোশাক লন্ড্রি করা আজকাল মানুষের দৈনন্দিন কাজের একটি অংশ। নিজ এলাকায় একটি পোশাক লন্ড্রির দোকানের ব্যবসা করলে তা লাভজনক ভাবে আগানো সম্ভব।
ব্যবসা শুরু করতে যা যা প্রয়োজন হবে তা হলো:
- একটি উন্নত ও বড় দোকান;
- কাপড় লন্ড্রি করার জন্য উন্নতমানের ইস্ত্রি বা আয়রন;
- পোশাক রাখার সেলফ ও টেবিল;
- দোকানে বৈদ্যুতিক সংযোগ;
- একজন দক্ষ কর্মী।
নিজস্ব এলাকায় একজন দক্ষ কর্মীর সাহায্যে ৩০ হাজার টাকা মূলধনে একটি লন্ড্রি দোকানের ব্যবসা শুরু করলে তা থেকে মাসে অনেক টাকা আয় করা যাবে।
৯. ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট
বিভিন্ন জন্মদিনের পার্টি, বিবাহবার্ষিকী, কর্পোরেট সমাবেশের মত ছোট আকারের অনুষ্ঠানগুলোর জন্য ইভেন্ট প্ল্যানার এর চাহিদা অনেক বেশি। একজন Event Planner এর কাজ হলো একটি অনুষ্ঠানের সকল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে করার দায়িত্ব নেয়া এবং তার পরিবর্তে আয় করা।
Event Management ব্যবসা শুরু করার জন্য যা যা লাগবে তা হলো:
- ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও প্ল্যানিং এর দক্ষতা;
- দক্ষ পরিশ্রমি সহকারি কর্মী;
- উন্নত মানের ক্যামেরা ও সাজগোজের সরঞ্জাম;
- অনুষ্টানের বিভিন্ন উপকরণ যেমন – চেয়ার,টেবিল, প্যান্ডেল সাউন্ড বক্স ইত্যাদি;
- সুন্দরভাবে সাজানোর দক্ষতা।
বর্তমানে Event Management এর চাহিদা অনেক বেশি এবং এসময় এ ধরনের ব্যবসা শুরু করল তাতে লাভ করার সম্ভাবনা আরও বেশি।
১০. অনলাইনে পোশাকের ব্যবসা
ঘরে বসে করার মতো একটি সহজ ও লাভজনক ব্যবসা হলো অনলাইনে পোশাকের ব্যবসা। তবে বর্তমানে এই মার্কেটটি অনেক প্রতিযোগিতাপূর্ণ ও ভরপূর হয়ে গেছে। তাই, এই মার্কেটে টিকে থাকতে আপনাকে ব্যতিক্রম ও ইউনিক কিছু আনতে হবে। তা হোক পন্যে বা কাস্টমার সন্তুষ্টি অর্জনে।
আপনি ৩০ হাজার টাকা মূলধন দিয়ে খুব সহজে ঘরে বসে এ ধরনের ব্যবসা শুরু করতে পারেন এবং মাসে মাসে হাজার হাজার টাকা আয় করতে পারবেন।
আরও পড়ুন: অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা করার নিয়ম
এই ব্যবসা শুরু করতে যা যা প্রয়োজন হবে তা হলো:
- অনলাইনে প্ল্যাটফর্মে একটি পেইজ বা স্টোর
- চাহিদাসম্পন্ন উন্নতমানের পোশাক
- কম্পিউটার বা স্মার্টফোন
- গ্রাহকদের সাথে ভাল Communication Skill
আপনি অনলাইনে কাপড়ের লাইভ করে বা প্রতিদিন আকর্ষণীয় পোস্ট করে আপনার সেল ও গ্রাহক বাড়াতে পারবেন ও সফলভাবে এই ব্যবসা করতে পারবেন।
শেষকথা
বর্তমানে অনলাইন ও প্রযুক্তির যুগে ব্যবসা করার জন্য টাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে একটি ভাল আইডিয়া এবং ব্যবসা করার ইচ্ছা ও মানসিকতা। ৩০ হাজার টাকায় আপনার এলাকা, অবস্থান ও বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যার প্রেক্ষিতে অনেক ব্যবসাই শুরু করতে পারেন।
আরও দেখতে পারেন: ১০ হাজার টাকায় ব্যবসার আইডিয়া
যে ব্যবসাই শুরু করতে যান, আপনাকে কমপক্ষে সে ব্যবসার ১০ বছর পর ভবিষ্যত দেখে শুরু করবেন। যদি মনে করেন, ব্যবসাটি আগামী ৫/১০ বছর পর তেমন চাহিদা তৈরি করতে পারবেনা, তার পিছনে সময় ব্যয় করা উচিত হবে না।