ফেসবুক রিলস থেকে ইনকাম করার ৭ উপায়
ফেসবুক রিলস থেকে Facebook Monetization, Ads on Reels, নিজের বা এফিলিয়েট পণ্য বিক্রয় সহ বিভিন্ন উপায়ে ইনকাম করা যায়। জানুন রিলস থেকে আয় করবেন যেভাবে।
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিনোদনের ট্রেন্ডিং বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ফেসবুকে রিলস। অনেকেই ফেসবুক রিলস থেকে ইনকাম করার উপায় জানতে চায়। কারণ বর্তমানে ফেসবুক থেকে আয় করার মাধ্যমে অনেক মানুষ স্বাবলম্বী হচ্ছে। আবার অনেকে এটিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে।
ফেসবুক রিলস ভিডিও গুলো একদিকে যেমন মানুষের জন্য বিনোদন সরবরাহ করছে তেমনি কনটেন্ট ক্রিকেটারদের জন্য ইনকামের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফেসবুক রিলস থেকে একাধিক উপায়ে ইনকাম করা যায়। এই ব্লগে ফেসবুক রিলস থেকে আয় করার কিছু উপায় নিয়ে বিস্তারিত লিখছি।
অনলাইনে আয় সম্পর্কিত আরও তথ্য:
ফেসবুক রিলস কি?
ফেসবুকের একটি জনপ্রিয় নতুন ফিচারের নাম হলো ফেসবুক রিলস। মূলত ফেসবুক রিলস বলতে ১৫ সেকেন্ড থেকে ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে তৈরি ছোট ছোট ভিডিওগুলোকে বোঝায়। এই ভিডিও গুলোকে TikTok কিংবা YouTube Shorts এর মত বলা যায়।
এক মিনিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ কিছু মজাদার কন্টেন্ট তৈরি করে সেগুলোতে ইফেক্ট, মিউজিক ব্যবহার করে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়। যা দর্শকদের বিনোদন যোগায়।
বর্তমানে TikTok এর মত ফেসবুক রিলস ও অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এর মাধ্যমে অনেক মানুষ ইনকাম করতে পারছে।
ফেসবুকে ভিডিওর মাধ্যমে টাকা উপার্জন আগে থেকেই ছিল। কিন্তু ফেসবুকের রিলস ভিডিওর মাধ্যমে উপার্জনের এর সুযোগ চালু হওয়ায় ,ফেসবুকে অনেক মানুষের ইনকাম বেড়ে গিয়েছে।
ফেসবুক রিলস থেকে ইনকাম করার উপায়
1. Facebook Monetization এর মাধ্যমে
ফেসবুক রিলস ভিডিও থেকে ইনকাম করার উপায় গুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত উপায় হলো মনিটাইজেশন করে ইনকাম। এক্ষেত্রে আপনাকে ভালো মানের রিলস ভিডিও গুলো তৈরি করে পাবলিশ করতে হবে।
রিলসগুলো আপনার Facebook Profile অথবা ফেসবুক পেজে পোস্ট করতে। ফেসবুক প্রোফাইল অথবা Facebook পেজ মনিটাইজ হয়ে গেলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব এড, দেখাবে আপনার ভিডিওতে। এবং আপনি ফেসবুক রিলস থেকে ইনকাম করতে পারবেন।
তবে মনিটাইজেশন চালু করার জন্য কতগুলো শর্তাবলী রয়েছে। সেই শর্তাবলী পূরণ করতে পারলে মনিটাইজেশন অন হবে। এরপর নতুন নতুন ভিডিও তৈরির মাধ্যমে টাকা উপার্জন করতে পারবেন।
ফেসবুক মনিটাইজেশন এর শর্তাবলী (H4)
ফেসবুক রিলস মনিটাইজেশন করার জন্য কিছু নিয়ম রয়েছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ দেওয়া এসকল নিয়মনীতি পূরণ করতে পারলেই ফেসবুক রিলস মনিটাইজেশন করা যাবে। মনিটাইজ করতে যা যা প্রয়োজন সেগুলো হলঃ
- বয়স ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে হতে হবে
- আপনার অ্যাকাউন্টটি প্রফেশনাল মুড অন করে রাখতে হবে
- অন্ততপক্ষে ৫টি ভিডিও আপলোড করতে হবে
- প্রোফাইলের জন্য ৫০০০ ফলোয়ার অন্যদিকে পেজের জন্য অন্তত ১০০০০ ফলোয়ার থাকতে হবে ।
- বিগত ২ মাসে ৬০ হাজার মিনিট Watch Time থাকতে হবে।
- অন্যের ভিডিও কপি করে দেওয়া যাবে না।
- রিলস ভিডিও গুলো ফেসবুক কনটেন্ট পলিসি মেনে বানাতে হয়।
উপরোক্ত শর্তগুলো পূরণ হলে ফেসবুক মনিটাইজেশন এর জন্য আবেদন করা যায়। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো দেখার পর মনিটাইজেশন দিয়ে থাকে।
2. Ads on Reels Video
ফেসবুকে Ads on Reels নামে নতুন একটি সুবিধা চালু হয়েছে। যার মাধ্যমে মনিটাইজেশনের ঝামেলা ছাড়াই থেকে টাকা উপার্জন করা যায়। এক্ষেত্রে আপনার ধরা বাধা ফলোয়ার বা ওয়াচ টাইম থাকতে হবে না। অল্প সংখ্যক ফলোয়ার এবং ওয়াচ টাইম থাকলেও রিলস থেকে উপার্জন করা সম্ভব।
আপনি নিয়মিত নিজের তৈরি ভালো মানের রিলস আপলোড করতে থাকলে একসময় ফেসবুক থেকে Ads on reels এর জন্য ইনভাইটেশন পাবেন এবং সেই ইনভাইটেশন একসেপ্ট করলে Ads on reels এর মাধ্যমে ইনকাম করতে পারবেন।
তবে অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় ভালো মানের ভিডিও আপলোড করেও ইনভাইটেশন আসছে না । সেক্ষেত্রে কিছু টিপস এন্ড ট্রিকস রয়েছে যেগুলো অনুসরণ করলে আপনি Ads on reels চালু করতে পারেন। অনলাইন থেকে খুব সহজে এই টিপস এন্ড ট্রিকস গুলো জানতে পারবেন ।
3. এফিলিয়েট মার্কেটিং
যদি আপনার ফেসবুক রিলস গুলোতে ভালো পরিমাণ ভিউজ আসে তাহলে আপনি রিলস এর মাধ্যমে এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারবেন।
একটি ভাল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রাম এর সাথে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন প্রোডাক্ট রিলস ভিডিওর মাধ্যমে অনলাইনে প্রচার করতে পারেন।
পণ্যের অ্যাফিলিয়েট লিংক ভিডিও এর ডেসক্রিপশন এ যুক্ত করতে পারবেন। যখন কেউ আপনার রিলস ভিডিওটি দেখে কেউ পণ্যটি কেনার জন্য অনুপ্রাণিত হবে এবং ডেসক্রিপশনে দেওয়া অ্যাফিলিয়েট লিংক এর মাধ্যমে পণ্যটি ক্রয় করবে তখন আপনি কমিশন পাবেন।
4. পণ্য বিক্রয় করে
অনলাইনে আপনার বা অন্য কোনো এফিলিয়েট প্রোডাক্ট বিক্রি করে ইনকাম করতে চান? তাহলে ভিডিওতে নিজের ব্র্যান্ড প্রমোট করুন। আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কিত রিলস ভিডিও বানান। ভিডিও দেখার পর প্রচুর মানুষ আপনার পণ্যের বিষয়ে জানতে পারবেন এবং যাদের প্রয়োজন হবে তারা আপনার কাছ থেকে কিনতে পারবে।
5. ক্রিয়েটর ফান্ড প্রোগ্রাম
ক্রিয়েটর ফান্ড প্রোগ্রাম হল ফেসবুক এর ক্রিয়েটরদের সাপোর্ট করার একটি প্রোগ্রাম। যারা বিশেষ কিছু মাইলস্টোন সম্পন্ন করে থাকেন এই প্রোগ্রাম দ্বারা সেই সকল ক্রিয়েটরদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয় । যেমন- উচ্চ মানসম্মত ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করা, প্রচুর সংখ্যায় ফলোয়ার পাওয়া ইত্যাদি।
তবে এ প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনাকে আবেদন করতে হবে এবং আবেদন করার জন্য নির্দিষ্ট কতগুলো যোগ্যতা রয়েছে। সেগুলো আপনার সাথে মিলে গেলেই আপনি আবেদন করতে পারবেন ।
6. স্পন্সর ও রেফার করে ইনকাম করুন
রেফার করে টাকা ইনকাম করার প্রচুর অ্যাপস অনলাইনে পাওয়া যায়। আপনাকে এমন একটি অ্যাপ বাছাই করতে হবে যেখানে রেফার করে সত্যি সত্যি টাকা পাওয়া যায়। যার ফলে আপনি কাউকে রেফার করলে যেমন টাকা পাবেন। তেমনি আপনার রেফার কৃত ব্যক্তি অন্যকে রেফার করলে টাকা পাবে।
এখন রেফার করে টাকা ইনকাম করার অ্যাপটি সম্পর্কে একটি রিল ভিডিও বানান এবং ডেসক্রিপশন বক্সে আপনার রেফারেল লিংক দিয়ে দিন। কেউ আপনার রেফারেল লিংক দিয়ে সেই অ্যাপটিতে এড হলে আপনি টাকা পাবেন।
7. Star থেকে ইনকাম
সাধারণ ব্যবহারকারীরা ফেসবুকে ক্রিয়েটরদের রিলসগুলোতে স্টার দিতে পারেন । পরবর্তীতে ক্রিয়েটররা এসব স্টার ফেসবুকের কাছে বিক্রি করে টাকা আয় করেন। প্রতিটি স্টার এর বিনিময়ে মেটার তরফ থেকে ১ সেন্ট করে দেওয়া হয়। রিলস ভিডিও গুলো যত অধিক লোকেরা দেখতে পাবে স্টার পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেড়ে যাবে।
ফেসবুক রিল প্রতি ভিউ কত টাকা দেয়?
ফেসবুক প্রতি ১০০০ রিলস ভিউতে কত টাকা দেয়া কত টাকা দেওয়া হয় তার নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। যেমন ধরুন আপনার ভিডিওটি যদি কোন বাংলাদেশি দেখে থাকে তাহলে আপনি কম পরিমাণ টাকা পাবেন। কিন্তু একই ভিডিও যদি উন্নত রাষ্ট্রের কোনো মানুষ দেখে তাহলে আপনি বেশি পরিমাণ এর টাকা পাবেন। সাধারণত আপনি প্রতি ১০০০ ভিউতে ১০-২০ ডলার পেতে পারেন।
কিভাবে ফেসবুকে বেশি ভিউ পাওয়া যাবে
- দর্শকদের চাহিদা ও আগ্রহ বিবেচনা করুন।
- স্পেশাল ইফেক্ট এবং ট্রানজিশন ব্যবহার করে রিলসকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলুন।
- স্পষ্ট, উচ্চ-মানের ভিডিও এবং অডিও ব্যবহার করুন।
- ভিডিও খুব সহজ এবং মজাদার করুন
- রিলসকে সংক্ষিপ্ত রাখুন।
- সপ্তাহে অন্তত ৩-৪ বার পোস্ট করার চেষ্টা করুন
- রিলসের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত, মজার এবং বর্ণনামূলক ক্যাপশন লিখুন
- ভিডিওর কমেন্টের উত্তর দিন এবং লাইক করুন
- আপনার রিলস সহজেই যেন খুঁজে পাওয়া যায় সেজন্য প্রাসঙ্গিক হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করুন।
- যে সময় মানুষ বেশি ইন্টারনেটে থাকে সেই সময়পোস্ট করার চেষ্টা করুন
ধৈর্য ধরুন এবং ক্রমাগত শিখুন। রাতারাতি সাফল্য আশা করবেন না। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে ফেসবুক রিলস থেকে ইনকাম করার উপায় গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে পেরেছেন। বর্তমানে রিলস ভিডিওর অধিকাংশই মানসম্মত নয়। যেগুলো দেখা বা বানানো দুটোই সময় অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।
সুতরাং মানসম্মত কনটেন্ট দিয়ে ভিডিও বানানোর চেষ্টা করা উচিত যা মানুষের কোনো উপকারে আসবে।