কম পুঁজিতে লাভজনক উৎপাদনমুখী ব্যবসার ৬ আইডিয়া
আপনি কি কম টাকায় একটি উৎপাদনমুখী ব্যবসা শুরু করতে চান? দেখুন কম টাকায় উৎপাদনমুখী ব্যবসা করার কিছু আইডিয়া।
চাকরি না করে বেকারত্ব দূর করার জন্য এবং বাড়তি আয় করার জন্য কম টাকায় উৎপাদনমুখী ব্যবসা শুরু করা অধিক শ্রেয়। অনেক কম টাকা দিয়ে উৎপাদনমুখী ব্যবসা শুরু করা সম্ভব এবং লাভজনকভাবে সফল হওয়া সম্ভব।
যারা ভালো চাকরি না পেয়ে বেকারত্বের সমস্যায় পড়েছে তাদের জন্য কম টাকায় উৎপাদনমুখী ব্যবসা করা একটি অন্যতম আয়ের উপায়।
উৎপাদনমুখী ব্যবসা কি
একটি উৎপাদনমুখী ব্যবসা হলো একটি উৎপাদন ভিত্তিক বা উৎপাদন কেন্দ্রিক কোম্পানী বা সংস্থা যারা পণ্য বা পণ্যের কাঁচামাল দক্ষভাবে উৎপাদন এবং সরবরাহ করে তা ক্রয় বিক্রয় করে।
উৎপাদনমুখী ব্যবসায় সফলতা অর্জনের জন্য উৎপাদন প্রক্রিয়া, প্রযুক্তি, উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যয় কমানোর উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
এই ব্যবসার মূল উদ্দেশ্য হলো কম খরচে প্রচুর পরিমানে চাহিদাসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করা এবং সঠিক মূল্য নির্ধারণ করে বাজারজাত করা।
উৎপাদনমুখী ব্যবসার ক্ষেত্রে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধৈর্য সহকারে চাহিদাসম্পন্ন মালামাল উৎপাদন করে এই ব্যবসা করতে পারলে মাসে মাসে হাজার হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।
আরও দেখুন: মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করার উপায়
কম টাকায় উৎপাদনমুখী ব্যবসার আইডিয়া
স্বল্প মূলধন বিনিয়োগ করে বা কম টাকায় যুগোপযোগী উৎপাদনমুখী ব্যবসার আইডিয়া হতে পারে:
- মৎস চাষ;
- প্যাকেজিং প্রোডাক্ট তৈরি;
- অন্যান্য পণ্যের কাঁচামাল;
- হস্তশিল্পের পণ্য;
- দুগ্ধজাতীয় খাদ্য উৎপাদন;
- পশু-পাখি পালন।
১. মৎস্য চাষ
অল্প পুজিতে খুব সহজ একটি উৎপাদনমুখী ব্যবসার আইডিয়া হলো মৎস্য চাষ বা মাছ চাষ করা। আপনি একটি নির্দিষ্ট পরিষ্কার পুকুরে সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা মূলধন ধরে মাছের পোনা কিনে মাছ চাষ করলে তা একটি সফল বিনিয়োগ হবে।
আজকাল অনেকেই বিদেশি মাছ বা মাছের পোনার কিনে তা চাষ করার মাধ্যমে মৎস্য চাষের মত সহজ উৎপাদনমুখী ব্যবসার প্রতি আগ্রহী হচ্ছে।
এই ব্যবসার মাধ্যমে সঠিকভাবে মাছের পরিচর্যা করলে আপনার মাছের উৎপাদন এবং আপনার আয় বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
আরও পড়ুন:
২. প্যাকেজিং প্রোডাক্ট তৈরি
কম টাকায় আরও একটি উৎপাদনমূখী ব্যবসা হতে পারে বিভিন্ন পন্যের Packaging উৎপাদন করা। আপনি বিভিন্ন পণ্যের জন্য উপযুক্ত Packet, Box ও Bag তৈরি করতে পারেন। বর্তমানে অনলাইনে কেনাকাটা ও ডেলিভারি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এই ইকমার্স কেনাকাটার সবচেয়ে বড় অংশটি দখল করবে।
ই-কমার্সের সাথে প্রোডাক্ট প্যাকেজিং অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত, আপনি চিন্তা করে দেখুন। তাই, এখানে Packaging Prodcuts যেমন, শপিং ব্যাগ, বক্স, কাটন ইত্যাদির চাহিদা বাড়ছে। তাছাড়া, তৈরি করা যায় কাগজের তৈরি প্লেট, কপি কাপ, জুস গ্লাস ইত্যাদি।
যদিও এখানে কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্লাস্টিং ব্যবহার করা হচ্ছে, কাগজের তৈরি কাটন আর বক্সের ব্যবহারও থাকছে অনেক প্রোডাক্টের জন্য। বিশেষ করে খাদ্য ও ভঙ্গুর আইটেমের জন্য অবশ্যই ভাল কাগজের তৈরি প্যাকেজিং প্রয়োজন হয়।
এখন প্রায় সব জায়গাতেই, স্থানীয় ব্যবসাীয়রা অনলাইনে বিক্রয়ে যুক্ত হচ্ছে। তাই এই ব্যবসা আপনি স্থানীয়ভাবেও শুরু করতে পারেন। শুধু অনলাইন বিক্রেতা নয়, স্থানীয়ভাবে বিক্রি হয় এমন পন্যের জন্য প্যাকেজিং প্রয়োজন হয়।
আপনাকে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে হবে, কোন ধরণের প্রোডাক্ট আপনার এলাকা প্রয়োজন বেশি, আপনি সেগুলো দিয়ে শুরু করতে পারেন।
কিভাবে প্যাকেজিং পন্যের ব্যবসা শুরু করবেন
প্যকেজিং প্রোডাক্ট ব্যবসা করার আগে, আপনার মার্কেট যাচাই করতে হবে যে আপনার কাস্টমার কারা হবে, চাহিদা কেমন ইত্যাদি। বর্তমানে মাকের্টে Available Prodcuts গুলোর দাম, অসুবিধা ইত্যাদি Analysis করতে হবে। কাঁচামাল কোথা থেকে সংগ্রহ করবেন, কাঁচামালের ব্যয় সব হিসাব করুন।
সবশেষে আপনার কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ উৎপাদন ব্যয় হিসাব করে আপনার Profit এবং বিনিয়োগের পরিমাণ হিসাব করেই ব্যবসার পরিকল্পনা করতে হবে।
আরও পড়ুন: ১০ হাজার টাকায় ব্যবসার আইডিয়া
৩. কাঁচামাল উৎপাদন
বিভিন্ন ধরনের জিনিসের কাঁচামাল উৎপাদন করা কম টাকায় উৎপাদনমুখী ব্যবসা শুরু করার একটি দুর্দান্ত উপায়।
বাজারে যে সকল পণ্যের চাহিদা বেশি সেসকল পণ্যের কাঁচামাল যদি আপনি উৎপাদন করতে পারেন তাহলে তা সরবারহ করে বা বিক্রি করে আপনি মাসে ভালো পরিমান অর্থ আয় করতে পারবেন।
খুব অল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করা যায় এবং ভালো মানের কাঁচামাল উৎপাদনের মাধ্যমে খুব সহজেই ব্যবসায় আয় উন্নতি করা যায়।
৪. হস্তশিল্পের ব্যবসা
আপনি যদি হাতের তৈরি বিভিন্ন জিনিস যেমন – মাটির তৈরি হাড়ি পাতিল, হাতে তৈরি গহনা, কাঠের চুরি ও অলংকার, হাতে তৈরি সুন্দর সুন্দর ব্যাগ ইত্যাদি তৈরি করতে পারেন তাহলে আপনি একটি হস্তশিল্পের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। হস্তশিল্প হতে পারে অল্প পুঁজিতে একটি উৎপাদনমুখী ব্যবসার আইডিয়া।
তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে আপনি হস্তশিল্পের ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনে এবং তা তৈরি করে অনলাইনে বা আপনার নিজস্ব দোকানে বিক্রি করতে পারবেন। তাছাড়া বিদেশে এসব হাতে তৈরি পন্য রপ্তানি করতে পারেন।
এক্ষেত্রে আপনাকে আরও কিছু দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ করতে হবে। অথবা আপনার এলাকার বেকার কিছু লোককে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়েও আপনার সাথে কাজে যুক্ত করতে পারেন।
এই ধরনের ব্যবসায় প্রচুর ধৈর্য ও পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও যেকোনো জিনিস হাতে তৈরি করার মত দক্ষতায় এবং অভিজ্ঞতা থাকায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাতে তৈরি বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে হস্তশিল্পের ব্যবসার মাধ্যমে মাসে মাসে প্রচুর টাকা আয় করা সম্ভব।
৫. দুগ্ধজাতীয় খাদ্য উৎপাদন
অল্প পুঁজি নিয়ে দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য উৎপাদন করে এবং তা বিক্রি করে খুব সহজ একটি উৎপাদনমুখী ব্যবসা শুরু করা যায়।
বাড়িতে গরু ছাগল পালনের মাধ্যমে বা খামার করে তার মাধ্যমে দুধ উৎপাদন করে তা থেকে বিভিন্ন ধরনের দুগ্ধজাতীয় খাবার যেমন পনির, ঘি, ছানা, মিষ্টি, দই ইত্যাদি উৎপাদন করে বাজারজাত করে বিক্রয় করা যায়। এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার অবশ্যই খাবার স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে।
১০ থেকে ২০ হাজার টাকা মূলধন ধরে খুব সহজে এই ব্যবসা শুরু করা যায়। তবে এই ব্যবসার ক্ষেত্রে দুগ্ধ জাতীয় খাবার তৈরি করার যথেষ্ট দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
দক্ষতার সাথে এই ব্যবসা করতে পারলে মাসে হাজার হাজার টাকা আয় করা সম্ভব হবে এবং ব্যবসায় সফলতা আসবে।
৬. পশু পাখি পালন
আমরা অনেকেই শখ করে পশু-পাখি পালন করে থাকি। তবে এই পশু-পাখি পালন করে আমরা খুব সহজে একটি উৎপাদনমুখী ব্যবসা শুরু করতে পারব।
৫ থেকে ৮ হাজার টাকা মূলধন নিয়েই আমরা বাড়িতে মোরগ মুরগী পালন করে বা একটি মুরগীর খামার করে মুরগির ছানা বৃদ্ধি করতে পারি এবং মুরগীর থেকে ডিম উৎপাদন করতে পারি।
এক্ষেত্রে মুরগি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ডিমের উৎপাদন বাড়তে থাকবে এবং সেগুলো বাজারে বিক্রি করে ভালো পরিমান অর্থ আয় করা সম্ভব।
আবার আমরা চাইলে বাড়িতে গরু বা ছাগল পালন করতে পারি যা থেকে দুধ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। গরু ছাগল পালনের মাধ্যমে দুধ উৎপাদন করে তা বাজারে বিক্রির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা যায় এটি খুবই লাভজনক।
উৎপাদনমুখী ব্যবসার মূলনীতি
একটি উৎপাদনমুখী ব্যবসা শুরু করার জন্য বিশেষ কিছু বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখা একান্ত জরুরি। উৎপাদনমুখী ব্যবসার ক্ষেত্রে যেসকল মূলনীতি অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- কম খরচে অধিক পণ্য উৎপাদন করার দক্ষতা ও কৌশলের মাধ্যমে ব্যবসা করলে তা লাভজনক হবে;
- এমন সকল চাহিদা সম্পন্ন পণ্য নির্বাচন করতে হবে যা সহজে উৎপাদন করা যায় এবং সহজে কপি করে অধিক হারে উৎপাদন করা যায়;
- বাজারে চাহিদা সম্পন্ন পণ্যের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য উচ্চ মানের প্রযুক্তি, সরঞ্জাম এবং অবকাঠামো বিনিয়োগ বা ব্যবহার করতে হবে;
- উৎপাদন করার পাশাপাশি পণ্য অধিক হারে সরবরাহ করার বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং পণ্যের সরবরাহ বজায় রাখতে হবে;
- আপনার উৎপাদনকৃত পণ্যের প্রচার প্রচারণা করতে হবে বা বিজ্ঞাপন দিতে হবে যাতে তা গ্রাহকদের কাছে চাহিদা সম্পন্ন হয়ে উঠে এবং অধিক হারে বিক্রয় হয়;
- উৎপাদনের জন্য পণ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের পছন্দ ও চাহিদাকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে এবং পণ্য সহজলভ্য করার জন্য সীমিত মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।
- ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে অবশ্যই ইসলামে ব্যবসা করার নিয়ম নীতি মেনে চলতে হবে।
শেষকথা
বেকারত্বের সমস্যা দূর করতে বা বাড়িতে বসে বাড়তি আয় করার জন্য একটি উৎপাদনমুখী ব্যবসা আয়ের উপায় হিসেবে অন্যতম। তাই কম পুঁজিতে একটি উৎপাদনমুখী ব্যবসা শুরু করে আর্থিক সফলতা পাওয়া সম্ভব হতে পারে।