১০টি স্টক ব্যবসার আইডিয়া ২০২৪

সিজনাল বা মৌসুমী পন্যগুলো স্টক বা মজুদ না করলে অফ সিজনে বা সারা বছর চাহিদা থাকলেও এসব পন্য পাওয়া যাবে না। জানুন পন্য মজুদ বা স্টক ব্যবসার কিছু আইডিয়া নিয়ে।

Advertisement

বর্তমান তরুণদের মধ্যে অনেকেই এখন চাকরির পেছনে না ছুটে ব্যবসা করার পরিকল্পনা করে থাকে। এখানে আমি শেয়ার করছি, ১০টি লাভজনক ও সময় উপযোগী স্টক ব্যবসার আইডিয়া বা পন্য মজুদ ব্যবসার আইডিয়া।

প্রতিযোগীতার এই বাজারে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা রয়েছে। এখান থেকে সঠিক ব্যবসাটি বাছাই করে সেটির মাধ্যমে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করার চেষ্টা করতে হবে।

ব্যবসা নামটা শুনলেই প্রথমেই মাথায় আসে অনেক লাভ কথাটি। কিন্তু ব্যবসায় লাভ করার জন্য দরকার প্রচুর ধৈর্য্য ও পরিশ্রম। আর ব্যবসা মানে শুধু লাভ নয় এর সাথে ক্ষতি ও সমান।

Advertisement

তবে আজ আপনাদের জন্য এমন একটি ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করব যাতে সঠিক শ্রম ও সময় দিয়ে পারলে প্রচুর লাভের সম্ভাবনা। আজ আমরা আলোচনা করব মজুদ মালের ব্যবসা বা স্টক ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে।

আরও দেখুন- নতুন ব্যবসার আইডিয়া ২০২৩

স্টক বা স্টক ব্যবসা কি

স্টক মানে হলো ভবিষ্যতের জন্য কোনো কিছু জমা করে রাখা, মজুদ করে রাখা। স্টক ব্যবসা হচ্ছে সিজনাল পণ্যগুলো সিজনের সময় কিনে অফ সিজনের জন্য সংরক্ষণ করা এবং বিক্রয় করা যাতে যাতে অফ সিজনে ভোক্তারা সেই পন্যটি পেতে পারে। এ ধরণের ব্যবসাকে অনেকে রাখি মালের ব্যবসাও বলে থাকে।

মৌসুমি পণ্য গুলো মৌসুমের সময় যোগান বেশি হওয়ার কারণে দাম খুব কম থাকে। অফ সিজনে পন্যের যোগান কম ও চাহিদা বেশি থাকার কারণে দাম কিছুটা বৃদ্ধি পায়। তাই এ ব্যবসায়ে লাভ অনেক ভাল থাকে।

তবে, স্টক ব্যবসা বা পন্যের মজুদ ব্যবসায় কোনভাবেই বাজারে সংকট তৈরি করার জন্য এবং দাম বৃদ্ধি করার জন্য মজুদ করা আইনগন ও ধর্মীয়ভাবে নিষেধ।

আরও পড়ুন:

Advertisement
  1. লাভজনক কৃষি ব্যবসার আইডিয়া
  2. ৩০ হাজার টাকায় ব্যবসার আইডিয়া
  3. ১০ হাজার টাকায় ব্যবসার আইডিয়া

স্টক ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়

  • প্রথমেই কোন পণ্য নিয়ে ব্যবসা করতে ইচ্ছুক তা ঠিক করতে হবে। পণ্য ক্রয় করার জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন যোগাড় করতে হবে।
  • স্টক ব্যবসা করার জন্য শুরুতেই পণ্য গুদামজাত করার জন্য একটি গুদাম দরকার। গুদামের জন্য ভালো স্থান বাছাই করতে হবে। মাল আনা নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যানের ব্যবস্থা থাকা ভালো।
  • স্টক ব্যবসা শুরু করার আগে অবশ্যই নিজের এলাকার পণ্যের চাহিদা সম্পর্কে জানা থাকা ভালো।
  • স্টক ব্যবসার মাল প্রান্তিক উৎপাদনকারীর কাছ থেকে ক্রয় করতে হবে। তাহলে এ ব্যবসায় লাভ সম্ভব। এ জন্য কোন এলাকায় কোন পণ্য অধিক উৎপাদন হয় এবং কোনটির বাজারমূল্য অধিক সেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। মোট কথা বাজার বিশ্লেষণ করতে হবে।  
  • মৌসুমের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • লাইসেন্স করতে হবে।

কি কি পণ্য নিয়ে স্টক ব্যবসা শুরু করতে পারেন তা নিচে দেওয়া হলো

স্টক ব্যবসার আইডিয়া

বাংলাদেশে আপনি যে সকল পণ্য মজুদের ব্যবসা করতে পারেন এগুলো হচ্ছে মূলত, খাদ্যদ্রব্য ও মশলা জাতীয় পণ্য। নিচে ১০ টি স্টক ব্যবসার আইডিয়া আলোচনা করলাম।

১. ধানের স্টক ব্যবসার আইডিয়া

ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য। ভাত বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য। কাজেই চালের চাহিদা প্রচুর। কাজেই ধান উৎপাদনের মৌসুমে প্রান্তিক চাষীদের কাছ থেকে অধিক পরিমানে ধান কিনে রাখলে মৌসুম শেষে বিক্রি করে ভালো আয় করা সম্ভব। এক মৌসুমের ফল যেমন অন্য মৌসুমে পাওয়া যায় তেমনি আপনি এক মৌসুমের খাদ্য শস্য আরেক মৌসুমে যোগান দিবেন।

আবার চাল গুড়া করে চালের গুড়ি ও বিক্রি করতে পারেন। এদেশে শীতকালে পিঠার চাহিদা বেশি থাকে। পিঠা বানানোর একমাত্র প্রধান উপকরণ চালের গুড়ি। এই সময় আপনি আপনার গুদামে থাকা চালের গুড়া বিক্রি করে ভালো আয় করতে পারবেন।

Advertisement
ধান ও চালের স্টক ব্যবসা

২. আলুর স্টক ব্যবসার আইডিয়া

আলু হচ্ছে খুবই পরিচিত একটি খাদ্যপণ্য। ভাতের পর আলুর উপরই বেশি ঝোঁক থাকে মানুষের। তরকারিতে যেমন প্রায় প্রতিটি পণ্যে আলু থাকে তেমনি আলু দিয়ে তৈরি হয় বিভিন্ন মুখরোচক খাদ্য। আলুর তৈরি ফ্রেঞ্চ ফ্রাই সবসময়ই জনপ্রিয়। আর এখন দিন দিন আলুর চিপস জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

সারা বছরই আলু চাহিদা থাকে। মৌসুমের সময় এই আলু ক্রয় করে তা গুদামজাত করে রাখলে পরবর্তীতে সারা বছর বিক্রি করে লাভ পেতে পারেন।

৩. পেঁয়াজ রসুনের স্টক ব্যবসা

পেঁয়াজ রসুনের চাহিদা আমাদের দেশে সব সময়ই ব্যাপক। এই কারনে বাইরে থেকে এসব আমদানি করতে হয়। আবার অনেক সময় পেঁয়াজ রসুন ব্যবসায়ীরা এসব কিনে স্টক করে রাখে এবং বাজারে কৃত্তিম সংকট তৈরি করে। এসব কারণে ও দাম বৃদ্ধি পায়। আপনি চাষীদের কাছ থেকে কম মূল্যে এসব পণ্য ক্রয় করে পরে সংকট সময়ে বাজারে বিক্রি করতে পারেন।

পেঁয়াজ রসুনের স্টক ব্যবসা

৪. সরিষার স্টক ব্যবসা

সরিষা তেলবীজ শস্য। বর্তমানে সরিষার তেলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তাই সরিষার স্টক ব্যবসা হতে পারে লাভজনক ব্যবসা। সরিষার মৌসুমে আপনি চাষীদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরিমান সরিষা কিনে রাখবেন। পরে বাজার বুঝে সরিষা দান বা সরিষার তেল বিক্রি করতে পারবেন।

৫. ইট স্টক ব্যবসা

বাড়িঘর তৈরির প্রধান উপকরণ ইট, বালি, সিমেন্ট। যেকোন নির্মাণ কাজে ইট অতি প্রয়োজনীয়। কাজেই ইটের স্টক ব্যবসাও অধিক লাভজনক হতে পারে। আমাদের দেশে বর্ষা মৌসুমে ইটের ভাটাগুলো কাজ করতে পারেনা তাই তখন ইটের উৎপাদন হ্রাস পায়। শুকনা মৌসুমে আপনি বেশি পরিমাণে ইট ক্রয় করে রাখলে পরবর্তীতে তা বিক্রি করে লাভ করতে পারবেন।

৬. গম /ভুট্টা/ যবের স্টক ব্যবসা

গম থেকে তৈরি হয় আটা, ময়দা যার চাহিদা সারা বছরই থাকে। ভাতের পাশাপাশি রুটির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এছাড়া ভুট্টা বা যবের চাহিদাও ভালো।

ভুট্টা থেকে তৈরি পপকর্ণ খুবই জনপ্রিয়। এখন অনেকেই গম বা যব দিয়ে তৈরি ছাতু খুব পছন্দ করে। বাজারমুল্য ও বাজার চাহিদা দেখে এসব পণ্য থেকে অন্য পণ্য রূপান্তর করতে হবে।

গম, ভুট্টা বা যব সঠিকভাবে গুদামজাত করে রাখতে পারলে নষ্ট হবার সম্ভাবনা নেই।

৭. বাদামের স্টক ব্যবসা

বাদাম সব সময়ই একটি ‍উপাদেয় ও সুস্বাদু খাদ্য। বাদামের চাহিদা সারাবছরই থাকে। বাদাম বিভিন্ন খাদ্যে ব্যবহৃত হয় তাই খুবই জনপ্রিয়। চীনা বাদাম, কাজু বাদাম, কাঠ বাদাম. পেস্তা বাদাম সহ বিভিন্ন বাদাম গুদামজাত করে রাখা যায়। পরবর্তীতে সময় অনুযায়ী বাজারদর বুঝে বিক্রি করা যাবে।

বাদামের মৌসুমে চাষীদের কাছ থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে কিনে রেখে পরে মৌসুম শেষে বাড়তি লাভে বিক্রি করা যাবে।

৮. স্টক লট ব্যবসা

স্টক লট ব্যবসা বলতে বুঝায় গার্মেন্টস পণ্যের ব্যবসা। বড় বড় কোম্পানি গুলো রপ্তানির উদ্দেশ্যে যেসব পণ্য তৈরি করে, কোনো কারণে সেগুলো যদি রপ্তানি না হয় তখন লোকাল মার্কেটে সেগুলা কম দামে বিক্রি করে দেয়। আপনি সেসব পণ্য পাইকারি দরে কিনে নিয়ে এসে পরে খুচরা মার্কেটে বিক্রি করতে পারেন।

৯. আদা বা তেজপাতার স্টক ব্যবসা

মসলা জাতীয় দ্রব্যের চাহিদা আমাদের দেশে সবসময়। বাঙালি ভোজনরসিক মানুষ। খাবারে তেল, ঝাল, মসলা বেশি পছন্দ করে থাকে। তাই এসব মসলা জাতীয় পণ্য গুদামজাত করে রাখতে পারেন।

১০. পাটের স্টক ব্যবসা

পাট বাংলাদেশের সোনালী আঁশ। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এই পণ্যটি দিন দিন লোপ পেয়ে যাচ্ছে। পাটকল গুলো পাটের পণ্য তৈরির জন্য পর্যাপ্ত পাট পায় না। কারণ অধিকাংশ সময় পাট ব্যবসায়ীরা পাট গুদামজাত করে রাখে আর মাত্রাতিরিক্ত মূল্য দাবি করে। এ সমস্যার জন্য পাটকল গুলো প্রয়োজনীয় পণ্য তৈরি করতে পারে না।

পাট মৌসুমে পাট চাষীদের থেকে সুলভ মূল্যে ক্রয়কৃত পাট পরবর্তীতে লাভে বিক্রি করতে পারেন। আর এখন পাটের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। পাট শুধু এখন আর বস্তাতেই সীমাবদ্ধ নেই। এর বিস্তৃতি ব্যাপক। কাজেই এটি হতে পারে অধিক লাভজনক ব্যবসা।

শেষকথা

পরিশেষে বলা যায় যে, যেকোনো ব্যবসায়ই লাভ লস থাকে। মজুদ মালের ব্যবসা বা স্টক ব্যবসায় ও এর ব্যতিক্রম নয়। সঠিক পরিকল্পনা থাকলে যেমন এ ব্যবসায় ভালো লাভ সম্ভব তেমনি জ্ঞানের অভাবে দারুন লসের শিকার ও হতে পারেন।

তাছাড়া যেকোনো ব্যবসার জন্যই ধৈর্য্য, একাগ্রতা, পরিশ্রম খুব বেশি প্রয়োজনীয়। অল্পতেই হতাশ হয়ে গেলে চলবেনা।

খেয়াল রাখতে হবে যেকোনো ব্যবসায় সততাই আসল। অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় স্টক করা পণ্যের কৃত্তিম সংকট তৈরি করা যাবে না। তাহলে ব্যবসার নৈতিকতা নষ্ট হবে।

ক্যাটাগরিব্যবসার আইডিয়া
ব্যবসা সংক্রান্ত সকল পোস্টBusiness

FAQs

স্টক ব্যবসা হালাল নাকি হারাম?

স্টক ব্যবসা হালাল তবে আপনি যদি অধিক লাভের আশায় আপনার স্টককৃত পণ্যটি বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেন তাহলে তা হারাম।

পন্য মজুদের ব্যবসা কিভাবে শুরু করব?

প্রথমে পন্য মজুদ ব্যবসা পরিচালনার জন্য আপনাকে সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন পন্যের মৌসুমে দাম ও মৌসুম শেষে পন্যের দাম, পন্য ‍গুদামজাতকরণ সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *