নগদ এজেন্ট বা উদ্যোক্তা একাউন্ট খোলার নিয়ম ও সুবিধা-অসুবিধা

নগদের উদ্যোক্তা একাউন্ট খুলে একজন এজেন্ট হিসেবে বাড়তি আয় করতে পারেন।জেনে নিন নগদ উদ্যোক্তা একাউন্ট খোলার নিয়ম, কমিশন আয় ও সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে।

Advertisement

ব্যবসায়ে টিকে থাকতে হলে কাস্টমার যেন ভাল Experience পায় সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাই আপনার মূল ব্যবসার পাশাপাশি নগদ, বিকাশ, রকেটের মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা, মোবাইল রিচার্জ ইত্যাদি সুবিধা দিতে পারেন আপনার কাস্টমারদের। এতে করে আপনি বাড়তি ইনকাম করতে পারছেন।

এই ব্লগে আলোচনা করব, কিভাবে নগদ উদ্যোক্তা একাউন্ট খুলে নগদ এজেন্ট হিসেবে ব্যবসা করবেন। তাছাড়া, উদ্যোক্তা একাউন্টের সুবিধা-অসুবিধা, বিনিয়োগ ও কমিশনের পরিমাণ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করব, ইনশাআল্লাহ।

নগদ উদ্যোক্তা একাউন্ট কি?

নগদ উদ্যোক্তা একাউন্ট হচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য নগদ এজেন্ট একাউন্ট। নগদ উদ্যোক্তা একাউন্টের মাধ্যমে Cash in, Cash out ও নগদের বিভিন্ন সেবা প্রদানের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কমিশন উপার্জন করতে পারে।

মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নগদ। বর্তমানে ফ্রি সেন্ড মানি ও কম খরচে ক্যাশ আউট সুবিধার কারণে অনেকেই এখন নগদ ব্যবহার করছে। তাই নগদ এজেন্ট ব্যবসা করে মোটামুটি ভাল কমিশন আয় করতে পারবেন আপনার মূল ব্যবসার পাশাপাশি।

আপনার যদি একটি মুদি দোকান, ফার্মেসী বা স্টেশনারি পন্যের ব্যবসা থাকে, তার পাশাপাশি Nagad Uddokta Account Registration করে নগদের এজেন্ট হয়ে কিছু বাড়তি আয় করতে পারেন। জানুন, নগদ উদ্যোক্তা একাউন্ট কিভাবে খুলবেন।

Advertisement

আরও পড়ুন:

নগদ উদ্যোক্তা একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে

নগদ উদ্যোক্তা একাউন্ট খোলার জন্য অবশ্যই আপনার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকতে হবে। এছাড়া, জাতীয় পরিচয় পত্র, টিআইএন সার্টিফিকেট, ট্রেড লাইসেন্স ও ৩ কপি ছবি লাগবে। উদ্যোক্তা একাউন্ট খোলার জন্য আপনার নিজ এনআইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা একটি মোবাইল নাম্বার লাগবে।

নগদ উদ্যোক্তা একাউন্ট খুলতে যা লাগবে:

  • ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান হিসেবে একটি দোকান; 
  • NID কার্ড/ ড্রাইভিং লাইসেন্স/ পাসপোর্ট এর কপি;
  • ব্যবসার প্রতিষ্ঠানের নামে নিবন্ধিত ট্রেড লাইসেন্স;
  • উদ্যোক্তার TIN সার্টিফিকেট এর কপি;
  • তিন কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি;
  • উদ্যোক্ত একাউন্ট পরিচালনার জন্য একটি মোবাইল সিম নম্বর।

উপরোক্ত ডকুমেন্টস থাকলে একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হয়েও নগদ উদ্যোক্তা একাউন্ট খোলার নিয়ম অনুযায়ী উদ্যোক্তা হতে পারবেন।

Advertisement

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থাকলে- ট্রেড লাইসেন্স, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি ও নির্বাচিত মোবাইল নাম্বার নিয়ে কাস্টমার কেয়ারে প্রদান করে উদ্যোক্তা একাউন্টের জন্য আবেদন করা যায়।

নগদ উদ্যোক্তা একাউন্ট খোলার নিয়ম

নগদ উদ্যোক্তা একাউন্ট খুলতে আপনার জাতীয় পরিচয়প পত্র, ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট, ৩ কপি ছবি ও নগদ একাউন্ট খোলা হয়নি এমন একটি মোবাইল নম্বরসহ Nagad Distributor অফিসে যোগাযোগ করুন। অথবা, আপনার এলাকার নগদের বিক্রয় প্রতিনিধির (SR) কে উদ্যোক্তা একাউন্ট খোলার বিষয়ে অনুরোধ করতে পারেন।

দুইটি উপায়ে নগদ উদ্যোক্তা একাউন্ট খোলা যেতে পারে:

  1. সরাসরি নগদ কাস্টমার কেয়ারে গিয়ে;
  2. নগদের বিক্রয় প্রতিনিধি (SR) এর মাধ্যমে।

১. নগদ কাস্টমার কেয়ারে উদ্যোক্তা একাউন্ট খোলার উপায়

প্রতিটি এলাকায় নগদের নির্দিষ্ট কাস্টমার কেয়ার রয়েছে। আপনার এলাকায় নগদের কাস্টমার কেয়ারে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সহ গিয়ে উদ্যোক্ত একাউন্ট খুলতে পারবেন।

Advertisement

ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের প্রমান, ট্রেড লাইসেন্স, আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি ও নির্বাচিত মোবাইল নাম্বার নিয়ে কাস্টমার কেয়ারে প্রদান করে উদ্যোক্তার জন্য আবেদন করতে হয়।

এজন্য যোগাযোগ করতে পারেন নগদ কাস্টমার কেয়ার সেন্টার- Nagad Sheba অথবা Distributor House

২. এস আর এর মাধ্যমে উদ্যোক্তা একাউন্ট খোলার উপায়

নগদের সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ দেশের প্রায় সকল অঞ্চলে যায়। আপনার এলাকাতেও অন্যান্য নগদ উদ্যোক্তাদের সাথে এস আর এর লেনদেনের চিত্র দেখে থাকবেন।

এস আর দের সাথে যোগাযোগ করে আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো তাকে দিয়ে নগদ উদ্যোক্তা একাউন্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

নগদ উদ্যোক্তা ব্যবসায়ে কি পরিমাণ বিনিয়োগ করতে হয়

আপনার ব্যবসার অবস্থান অনুযায়ী নগদ উদ্যোক্তা একাউন্টে অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবেন। সাধারণত শহরাঞ্চলে এবং অধিক জনবহুল হলে এলাকায় প্রাথমিকভাবে এক থেকে দুই লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন।

তবে গ্রামীন এবং কম জনবহুল এলাকায় নগদের উদ্যোক্তা হলে ছোট পরিসরে প্রাথমিকভাবে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন। পরবর্তীতে ব্যবসায়ের প্রসার অনুযায়ী তা বৃদ্ধি করতে পারবেন।

নগদ উদ্যোক্তা একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পন্ন করে লেনদেনের পরিমাণ বেশি হলে বেশি বিনিয়োগ করে মুনাফাও উপার্জন করতে পারবেন। তবে লেনদেনের পরিমাণ কম হলে একসাথে অনেক টাকা বিনিয়োগ করলে তা আপনার পুঁজি সমন্বয়ে ঘাটতির সৃষ্টি করতে পারে।

নগদ এজেন্ট ব্যবসায়ে মুনাফা কেমন

নগদ এজেন্ট হয়ে নগদে লেনদেন করার জন্য প্রতি লেনদেনে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কমিশন প্রদান করা হয়। সাধারণত নগদের লেনদেনে কমিশনের পরিমাণ প্রতি হাজারে ৪ টাকা ১০ পয়সা বা ০.৪১% করে প্রদান করা হয়। 

নগদ উদ্যোক্ত একাউন্ট থেকে আপনি কেমন মুনাফা অর্জন করতে পারবেন তা নির্ভর করে লেনদেনের উপর। আপনার লেনদেন বেশি হলে বিশেষ করে সেন্ড মানি বেশি হলে প্রতিদিন অন্যান্য ব্যবসার পাশাপাশি এখান থেকে প্রায় ৩০০-৫০০ টাকা উপার্জন করতে পারবেন।

এছাড়াও অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও মোবাইল রিচার্জ করেও অনেক বেশি উপার্জন করা সম্ভব।

নগদ উদ্যোক্তা একাউন্টের সুবিধা

ব্যবসায়ীদের জন্য নগদ উদ্যোক্তা একাউন্ট খুবই লাভজনক একটি উপায়। ব্যবসায়ে কিছু বাড়তি সুবিধা, যেমন- 

  • যেকোনো ক্ষুদ্র ব্যবসার পাশাপাশি অথবা ছোট পরিসরে নগদ উদ্যোক্তা ব্যবসা করা যায়;
  • আলাদা কোন দোকান নিতে হয় না বরং অন্য ব্যবসায়ের সাথে করা যায়
  • বর্তমান ব্যবসার কাস্টমারকেই সেবা দিতে পারবেন।;
  • একাউন্টের আর্থিক লেনদেনের নিরাপত্তা পাওয়া যায়;
  • নগদের অর্থ লেনদেনের পাশাপাশি মোবাইল রিচার্জ, বিল পেমেন্ট সহজেই করা যায়;
  • এজেন্ট হিসেবে অর্থ লেনদেনের বিনিময়ে মুনাফার হার পাওয়া যায়।

মুদি দোকান, ফার্মেসি, মোবাইল সার্ভিসিং ইত্যাদি যে কোন ব্যবসার সাথে নগদ উদ্যোক্তা একাউন্ট খোলার নিয়ম মেনে একাউন্ট খুলে বাড়তি মুনাফ অর্জন করতে পারবেন।

নগদ উদ্যোক্তা একাউন্টের অসুবিধা

নগদ উদ্যোক্তা একাউন্টের তেমন কোনো অসুবিধা নেই। তবে,

  • উদ্যোক্তা ছাড়া যে কেউ চাইলেই এই উদ্যোক্তা একাউন্ট খুলতে পারে না;
  • একাউন্ট খোলার জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়;
  • একাউন্ট থেকে অর্থ উত্তোলন করতে ব্যাংকের শরণাপন্ন হতে হয়।

তবে আপনার যদি একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থাকে তাহলে খুব সহজেই নগদ উদ্যোক্তা একাউন্ট খুলে এর সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

FAQ’s

নগদ এজেন্ট কমিশন কত টাকা?

নগদ এজেন্ট লেনদেনের উপর প্রতি হাজারে ০.৪১% বা ৪ টাকা ১০ পয়সা পেয়ে থাকে। 

অন্য মোবাইল ব্যাংকিং এর এজেন্ট হওয়া সিমে কি নগদের এজেন্ট হওয়া যায়?

একই সিমে একাধিক মোবাইল ব্যাংকিং এর এজেন্ট হওয়া যায়। তাই আপনি যদি পূর্বেই বিকাশ বা অন্য কোন মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থার এজেন্ট হয়ে থাকেন সেই সিম ব্যবহার করেই নগদের এজেন্ট হওয়া যাবে।

নগদ উদ্যোক্তা কিভাবে হওয়া যায়?

আপনার ইতোমধ্যে কোন ব্যবসা থাকলে সেই ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স, আবেদনকারীর আইডি কার্ডের কপি, ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও উদ্যোক্তা অ্যাকাউন্ট পরিচালনার জন্য সিম নাম্বার নিয়ে সরাসরি কাস্টমার কেয়ার কিংবা স্থানীয় নগদ এসআর এর সাহায্যে উদ্যোক্ত একাউন্ট খোলা যায়।

নগদের এজেন্ট হতে কত টাকা লাগে?

নগদের এজেন্ট হতে কোন বাড়তি ফি প্রদান করতে হয় না। তবে আপনার প্রতিষ্ঠানের অবস্থান বিবেচনা করে এজেন্ট একাউন্টে প্রাথমিকভাবে ৩০,০০০-৫০,০০০ টাকা ডিপোজিট করতে হবে।

শেষকথা

নগদ উদ্যোক্তা হওয়া একটি বাড়তি আয়ের সুযোগ। ইতোমধ্যেই, আপনার একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থাকলে তার পাশাপাশি নগদ উদ্যোক্তা একাউন্ট খোলার নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করুন। অতঃপর অল্প কিছু বিনিয়োগ করে নগদের উদ্যোক্তা হতে পারেন।

আজকের আলোচনা জানতে পারলাম- নগদ উদ্যোক্তা একাউন্ট খোলার নিয়ম । লেখা সম্পর্কিত কোন মতামত থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। অনলাইন সেবাভিত্তিক এরকম তথ্য জানতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট, ধন্যবাদ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *