বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট এর সুবিধাগুলো কি কি
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টের সুবিধা হলো কোন লিমিট ছাড়াই যে কোন পরিমাণ টাকা পেমেন্ট গ্রহণ করা যায়। তাছাড়া, পেমেন্ট গ্রহণের জন্য রয়েছে কয়েকটি সুবিধাজনক মাধ্যম।
বর্তমানে ব্যবসায়ীদের জন্য বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট জনপ্রিয় ও সুবিধাজনক হিসেবে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। কিন্তু bKash Merchant Account আসলে কি, বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টের সুবিধাগুলো কি কি, কেন আপনার ব্যবসার জন্য মার্চেন্ট একাউন্ট প্রয়োজন এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত জানাব। আশা করি আপনার অনেক উপকারে আসবে।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট কি?
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট হলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি বিশেষ একাউন্ট যার মাধ্যমে কাস্টমার থেকে যে কোন এমাউন্ট দৈনিক বা মাসিল লিমিট ছাড়াই পেমেন্ট গ্রহণ করা যায়।
ব্যবসা ক্ষেত্রে ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবহার করে লেনদেন প্রক্রিয়াকে সহজ ও দ্রুত করতে বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট অসাধারণ ভূমিকা পালন করে।
এখন প্রশ্ন হতে পারে বিকাশ পার্সোনাল একাউন্টের মাধ্যমেও তো লেনদেন করা যায় তাহলে কেন মার্চেন্ট একাউন্ট ব্যবহার করব? কারণ হচ্ছে, বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টের কিছু বিশেষ সুবিধা যা পার্সোনাল বিকাশ একাউন্টে পাবেন না।
ব্যবসার ক্ষেত্রে ক্রেতা বিক্রেতার অনেক লেনদেন হয়। যার ফলে একটি বৃহৎ অংকে টাকা প্রতিদিন লেনদেনের প্রয়োজন পড়ে কিন্তু পার্সোনাল একাউন্টে এত টাকা আদান প্রদান করার লিমিট থাকে না। অন্যদিকে মার্চেন্ট একাউন্টে ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
তাই আপনিও আপনার ব্যবসার জন্য আজই বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য অনুরোধ পাঠাতে পারেন।
আসুন জেনে নিই বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টের সুবিধাসমূহ কি কি।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টের সুবিধা
বিকাশ পার্সোনাল একাউন্টের পর নতুন এক উদ্ভাবন হলো বিকাশের মার্চেন্ট একাউন্ট। যা ব্যবসায়ীদের গ্রাহকের কাছ থেকে সঠিকভাবে পেমেন্ট নিতে সাহায্য করে এবং এর কিছু বিশেষ সুযোগ সুবিধা রয়েছে যার ফলে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই উপকৃত হয়। যেমন-
১. একই এনআইডি কার্ড দিয়ে মার্চেন্ট একাউন্ট খোলা
আপনার এনআইডি কার্ড দিয়ে যদি ইতোমধ্যে একটি বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট খোলা থাকে, পাশাপাশি একই এনআইডি দিয়ে অন্য মোবাইল নম্বরে মার্চেন্ট একাউন্ট খুলতে পারবেন।
অর্থাৎ একজন ব্যক্তি একটি জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে একটি পার্সোনাল একাউন্ট এবং একটি মার্চেন্ট একাউন্ট খুলতে পারবেন।
২. বিভিন্ন পেমেন্ট অপশনে Instant Payment গ্রহণ
কাস্টমার থেকে Direct Payment, QR Code, Payment Link, ওয়েবসাইট এবং Visa Card এর মাধ্যমে পেমেন্ট গ্রহণ করা যায়। এছাড়া, Ecommerce Website সহ যেকোন সাইটে বিকাশ পেমেন্ট গেটওয়ের API ব্যবহার করে অটোমেটিক পেমেন্ট নিতে পারবেন।
কাস্টমার তার কোন বাড়তি খরচ ছাড়াই যেকোন এমাউন্ট পেমেন্ট করতে পারবে, যা কাস্টমারের জন্য একটি সুবিধাজনক অপশন।
৩. লেনদেনের লিমিট নেই
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টে লেনদেনের কোন লিমিট নাই। কাস্টমার থেকে ১ টাকা থেকে যেকোন পরিমাণ টাকার পেমেন্ট গ্রহণ করতে পারবেন।
৪. কম খরচে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন
মার্চেন্ট একাউন্টে গ্রহণ করা টাকা বের করার জন্য আপনাকে ব্যাংক একাউন্ট ব্যবহার করতে হবে। অন্য পেমেন্ট গেটওয়ের চেয়ে তুলনামূলক কম খরচে বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট থেকে ব্যাংকে ট্রান্সফার করতে পারবেন।
৫. Transaction দেখা এবং লেনদেন বাতিলের সুবিধা
বিকাশ পেমেন্ট একাউন্টে বা মার্চেন্ট একাউন্টে সব (Transactions) লেনদেনের তথ্য দেখার যাবে। এছাড়া, বিকাশ মার্চেন্ট অ্যাপ থেকে কোন লেনদেন বাতিল করার সুবিধাও রয়েছে।
Transactions অপশন থেকে কাস্টমারের বিকাশ নাম্বার বা ট্রানজেকশন নাম্বার দিয়ে সার্চ করে সেই লেনদেনের তথ্য দেখা যাবে।
এছাড়া, কোন কাস্টমারের অর্ডার বাতিল হলে, কাস্টমারের বিকাশ একাউন্টে টাকা রিফান্ড করা খুব সহজ হবে। Transaction ID বা কাস্টমারের বিকাশ নাম্বার দিয়ে সার্চ করে লেনদেনটি খুঁজে নেয়ার পর লেনদেনটি বাতিল করে টাকা রিফান্ড করা যাবে।
৬. সুরক্ষিত ও ঝামেলাবিহীন লেনদেনের মাধ্যম
আপনার গ্রাহকদের কাছ থেকে পেমেন্ট গ্রহণ করার একটি নিরাপদ ও ঝামেলাবিহীন মাধ্যম হতে পারে বিকাশ। কারণ বিকাশ সবাই ব্যবহার করছে, এবং বিকাশে পেমেন্ট করা সহজ বিধায়, কাস্টমার এতে পেমেন্ট করতে বেশি স্বাছ্যন্দ বোধ করে।
বিকাশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক সুরক্ষিত। তাই আপনি সাধারণ কিছু সচেতনতা মেনে চললে, বিকাশে লেনদেন নিয়ে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।
আরও পড়ুন:
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টের অসুবিধা
- আপনার আইডি দ্বারা যদি বিকাশ এজেন্ট বা রিটেইল একাউন্ট খুলে থাকেন তাহলে সেই আইডি কার্ডটি দ্বারা বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট চালু করতে পারবেন না।
- বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টে থেকে শুধুমাত্র পার্সোনাল বিকাশ একাউন্ট থেকে পেমেন্ট রিসিভ করতে পারবে। কিন্তু এজেন্ট বা মার্চেন্ট একাউন্ট হতে টাকা গ্রহণ করা যাবে না।
- এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে সেন্ড মানি করা যাবে না পেমেন্ট করতে হবে।
- কেবলমাত্র ব্যাংক ট্রান্সফার এবং বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টের টাকা তুলতে পারবেন।
বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট ও মার্চেন্ট একাউন্টের মধ্যে পার্থক্য
পার্সোনাল বিকাশ একাউন্ট | মার্চেন্ট বিকাশ একাউন্ট |
ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয় | ব্যবসার জন্য ব্যবহৃত হয় |
লেনদেনে লিমিট রয়েছে | লেনদেনের লিমিট নেই |
যেকোনো সময় ক্যাশ আউট করা যায় | সব সময় ক্যাশ আউট করার সুবিধা থাকে না |
লেনদেন বাতিল করা যায় না | লেনদেন বাতিল করার সুবিধা রয়েছে |
ক্যাশ আউট চার্জ ১.৮৫% এবং প্রিয় এজেন্টে ১.৪৯%। | বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট থেকে ব্যাংকে ট্রান্সফার চার্জ ১% |
কোন অ্যাকাউন্ট ভালো বিকাশ পার্সোনাল নাকি মার্চেন্ট?
আপনার যদি প্রতি মাসে কাস্টমার থেকে প্রায় ৩ লক্ষ টাকার বেশি পেমেন্ট নিতে হয়, আপনার বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট ব্যবহার করা উচিত। এর কম হলে, আপনি আপাতত বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট ব্যবহার করতে পারেন।
পার্সোনাল একাউন্ট এর তুলনায় আপনি এই একাউন্টে বেশি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট তুলনায় মার্চেন্ট একাউন্ট এর ক্যাশ আউট চার্জ অনেক কম। বর্তমানে বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট এর ক্যাশ আউট চার্জ ১.৮৫% তবে বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট এর চার্জ ১%।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে?
- একটি বৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের ঠিকানা (যদি থাকে)
- ব্যাংক অ্যাকাউন্ট
- এনআইডি বা পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স
- মেয়াদসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স।
ডিজিটাল বাংলাদেশের এই যুগে ছোট বড় সব ব্যবসার জন্য যেন মার্চেন্ট একাউন্ট একটি অপরিহার্য বিষয় হয়ে উঠেছে। তাই ব্যবসার লেনদেন কে ঝামেলা মুক্ত ও সময় সাশ্রয় করতে বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খুলতে পারেন।