ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম ২০২৫: কি কি লাগে ও কিভাবে পাবেন
নতুন ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন? এখন ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া যাবে অনলাইনে। কি কি লাগবে, কিভাবে অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন করবেন দেখুন বিস্তারিত।

প্রতিটি ব্যবসা পরিচালনার জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট হচ্ছে ট্রেড লাইসেন্স। এটি শুধু একটি কাগজ নয় বরং একটি ব্যবসার আইনগত বৈধতা, সুরক্ষা এবং সঠিকভাবে পরিচালনার নিশ্চয়তা দেয়। বাংলাদেশে Trade License ছাড়া যেকোনো ব্যবসা পরিচালনা করা বেআইনি। তাই ছোট হোক বা বড়, যেকোনো ধরনের ব্যবসার ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে।
ট্রেড লাইসেন্সের আবেদনের সাথে আরও কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে। কি কি কাগজ লাগবে তা নির্ভর করে আপনার ব্যবসার ধরণ ও ব্যবসার অবস্থানের উপর। যেমন – বাণিজ্যিক, শিল্প ও সেবা প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স। ক্যাটাগরি ও ব্যবসার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে ট্রেড লাইসেন্সের ফি ও ভিন্ন হয়ে থাকে।
আপনি যদি নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স করার কথা ভেবে থাকেন, আগে এই বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া ও খুঁটি-নাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা জরুরী।
এই ব্লগে আমরা ট্রেড লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তা, ট্রেড লাইসেন্সের জন্য কি কি লাগে, আবেদন প্রক্রিয়া, ট্রেড লাইসেন্স ফি, নবায়ন ও বাতিল করা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
ট্রেড লাইসেন্স কি?
ট্রেড লাইসেন্স হলো কোন ব্যবসা করার জন্য বৈধ অনুমতিপত্র যা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ থেকে সংগ্রহ করতে হয়। এটি একটি সরকারি অনুমতি যা কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা সেবা পরিচালনার জন্য বাধ্যতামূলক।
ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া কোনো ব্যবসা পরিচালনা করা বেআইনি। এটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা, মালিকানা, ব্যবসার ধরণ ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করে। এটি মূলত স্থানীয় সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রদান করা হয়।

আপনার যদি আলাদা আলাদা কয়েকটি ব্যবসা থাকে, প্রত্যেক ব্যবসার জন্যই আলাদাভাবে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। এছাড়া একই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যদি ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় ব্যবসায় কার্যক্রম থাকে, ওইসব এলাকার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন বা পৌরসভা থেকে আলাদাভাবে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে।
নতুন লাইসেন্স সংগ্রহ ও নবায়নের জন্য নির্দিষ্ট ফি পরিশোধ করতে হয়। Trade License Fee সাধারণত ব্যবসার লোকেশন, ব্যবসার ধরণ ও আয়তনের উপর নির্ভর করে ভিন্ন হয়ে থাকে।
আরও দেখুন:
ট্রেড লাইসেন্স এর ধরন
ট্রেড লাইসেন্সের ধরন ব্যবসার প্রকৃতি ও অবস্থানের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়। সাধারণত তিনটি ধরণের ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে:
বাণিজ্যিক লাইসেন্স: এই লাইসেন্সটি মূলত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য। দোকান, রেস্টুরেন্ট, সুপার শপ, ইলেকট্রনিক্স শোরুম, গাড়ির গ্যারেজ ইত্যাদির জন্য এটি প্রয়োজন।
শিল্প কারখানা লাইসেন্স: এই লাইসেন্সটি মূলত উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠান বা কারখানার জন্য প্রযোজ্য। যেমন: গার্মেন্টস, প্লাস্টিক ফ্যাক্টরি, প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রি ইত্যাদি।
সেবা প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স: এটি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান যেমন হাসপাতাল, ক্লিনিক, ব্যাংক, বীমা কোম্পানি, আইটি ফার্ম ইত্যাদির জন্য প্রযোজ্য।
ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ
ট্রেড লাইসেন্স সাধারণত ১ বছরের জন্য বৈধ। মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে তা নবায়ন করতে হবে এবং নবায়ন না করলে জরিমানা গুনতে হতে পারে।
কেন ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন?
১. আইনগত বৈধতা:
যে কোন ধরণের ব্যবসা করতে গেলেই স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। যে কোন ধরণের সরকারি সুবিধা, ব্যাংকিং, ই কমার্স ও আর্থিক লেনদেনের জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন হয়।
২. কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তা
ট্রেড লাইসেন্সের মাধ্যমে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান একটি আলাদা ব্যক্তিসত্তা লাভ করে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিজেই ব্যক্তির মত বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিতে পারে, যেমন।
- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা;
- ব্যাংক থেকে ঋণ বা মূলধন সংগ্রহ;
- অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করা, ইত্যাদি।
ট্রেড লাইসেন্স করার যোগ্যতা
- আবেদনকারীকে অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্ক (১৮+) হতে হবে।
- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত স্থান ও ঠিকানা থাকতে হবে।
- অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
- ব্যবসার ধরন অনুযায়ী নির্দিষ্ট ফি পরিশোধ করতে হবে।
- আবেদনকারীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ফৌজদারি মামলা থাকা যাবে না।
ট্রেড লাইসেন্স করতে কি কি লাগে?
ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য নিম্নলিখিত কাগজপত্র প্রয়োজন:
- আবেদন ফরম (অনলাইন/অফলাইন)
- মালিকের ছবি (সর্বশেষ)
- অফিস বা দোকান ভাড়ার চুক্তি পত্র (ভাড়াটিয়া হলে), ভাড়ার রশিদ
- জমির দলিল বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (মালিক হলে)
- কর পরিশোধের রশিদ
- মেমোরেন্ডাম এর কপি (লিমিটেড কোম্পানী হলে)
- জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা পাসপোর্ট কপি
- Tax Identification Number (TIN)
- আগের লাইসেন্সের কপি (যদি নবায়ন হয়)
- অগ্নি নিরাপত্তা ও পরিবেশ ছাড়পত্র (যদি প্রয়োজন হয়)
ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য কোথায় যেতে হবে?
ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য প্রথমে আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে, আপনি কোন স্থানীয় সরকারের অধীনে ব্যবসা করতে যাচ্ছেন। স্থানীয় সরকার বলতে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা বা উপজেলা পরিষদকে বোঝানো হয়। আপনার ব্যবসায়িক কার্যক্রম যে এলাকার অধীন আপনি সেই এলাকার স্থানীয় সরকার অফিসে যোগাযোগ করে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে।
দেশের প্রায় সব সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন পদ্ধতি চালু আছে। অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করে ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন ও লাইসেন্স সংগ্রহ করা যাবে। এছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে ও অনলাইন আবেদন ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
তাই, Trade License করার জন্য আগে যাচাই করে নিন, যে অনলাইনে আবেদন করা যাবে কিনা।
ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম
ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য বর্তমানে বেশিরভাগ ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন ই ট্রেড লাইসেন্স সিস্টেম চালু করেছে। এক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদন করে অনলাইনেই ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করা যাবে। আগে যাচাই করে দেখুন যে আপনার এলাকায় ই ট্রেড লাইসেন্স পদ্ধতি চালু আছে কিনা, চালু না থাকলে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদন করার পর, লাইসেন্স সুপারভাইজার সরেজমিনে তদন্ত করে আবেদনের তথ্য সঠিক পাওয়া গেলে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করেন।
অনলাইনে ই ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন প্রক্রিয়া
বর্তমানে সব সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন গ্রহণ করে। এছাড়া বেশিরভাগ ইউনিয়ন পরিষদেও অনলাইনে বিভিন্ন সনদ ও ট্রেড লাইসেন্স দেয়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্সের আবেদনের পদ্ধতি এবং বিভিন্ন তথ্য নিচে শেয়ার করলাম।
ধাপ ১: ই ট্রেড লাইসেন্স আবেদনের লিংকে ভিজিট করুন
সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ট্রেড লাইসেন্স অনলাইন আবেদন ফরম খুঁজে নিন। নিচে বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশনের Trade License Online Application Form এর লিংক দেয়া হয়েছে। এখানে দেখুন – অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স আবেদনের লিংক।
ধাপ ২: রেজিস্ট্রেশন করুন
কোন কোন ওয়েবসাইটে আবেদন করার জন্য প্রথমে আপনার নাম, মোবাইল, ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হতে পারে।
ধাপ ৩: মালিকের তথ্য ও ব্যবসার তথ্য দিন
ট্রেড লাইসেন্সের জন্য বিশেষ করে মালিক ও ব্যবসা সম্পর্কিত তথ্য দিতে হয়। এক্ষেত্রে আপনাকে যেসব তথ্য দিতে হতে পারে, এগুলো হচ্ছে:
- মালিকের নাম ও ঠিকানা
- জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর
- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম
- ব্যবসার ধরণ বা ক্যাটাগরি
- ব্যবসার অবস্থানা ও ঠিকানা
সব তথ্য সঠিকভাবে দেখে শুনে, ধীরে সুস্থে লিখুন এবং ফাইনাল সাবমিট দেয়ার আগে, আবার চেক করুন।
ধাপ ৪: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করুন
এই ধাপে কিছু ডকুমেন্ট আপলোড করার প্রয়োজন হতে পারে, যেমন:
- মালিকের এনআইডি কার্ড অথবা জন্ম নিবন্ধন
- মালিকের ছবি
- দোকান বা অফিস ভাড়া নেয়ার চুক্তি অথবা জমি থাকলে জমির খতিয়ান কপি
- অন্যান্য কোন লাইসেন্স বা অনুমতিপত্র (প্রয়োজন হলে)
এই ডকুমেন্টগুলোর স্ক্যানড কপি আপলোড করে আবেদন সাবমিট করতে হবে। ডকুমেন্টগুলো আপলোড করার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন, যেন ছবিগুলো পরিস্কার ও ভাল রেজুলেশনে হয়।
ধাপ ৫: আবেদন সাবমিট ও ফি পরিশোধ করুন
সব তথ্য সঠিকভাবে দেয়ার পর আবেদনটি সাবমিট করতে হবে। কোন কোন সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স ফি সংগ্রহ করতে পারে, আবার অফিসে কাগজপত্র জমা দেয়া সময়ও ফি নিতে পারে। অনলাইনে ফি পরিশোধ করার ব্যবস্থা থাকলে, অবশ্যই অনলাইনেই পেমেন্ট করুন।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনাকে অনলাইনে আবেদন করার পর আবেদনের কপি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদে জমা দিতে হবে। সেক্ষেত্রে, আবেদন করে আবেদনের প্রিন্ট কপি সহ দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট অফিসে যোগাযোগ করুন।
ধাপ ৬: ট্রেড লাইসেন্স ডাউনলোড
অনলাইনে ই ট্রেড লাইসেন্সের আবেদনটি অনুমোদন হলে, আপনার প্রোফাইল থেকে ট্রেড লাইসেন্সের কপিটি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। এরপর এটি প্রিন্ট করে আপনি ব্যবহার করতে পারেন এবং আপনার ব্যবসার যাবতীয় কার্যক্রম চালু করতে পারেন।
অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স আবেদনের লিংক
কর্তৃপক্ষ | ট্রেড লাইসেন্স আবেদনের লিংক |
---|---|
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন | http://erevenue.dncc.gov.bd/cp/cportal/cp/nsignup.aspx |
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন | http://erevenue.dscc.gov.bd/cp/cportal/cp/southcc.aspx |
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন | http://202.40.185.190/chtg/cp/cportal/cp/chtgcc.aspx |
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন | www.etradelicense.gov.bd |
রংপুর সিটি কর্পোরেশন | www.etradelicense.gov.bd |
খুলনা সিটি কর্পোরেশন | https://kcctl.gov.bd |
সিলেট সিটি কর্পোরেশন | Digital Trade Licence – Sylhet City Corporation |
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন | কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন ট্রেড লাইসেন্স আবেদন |
ট্রেড লাইসেন্স ফি তালিকা
নতুন ট্রেড লাইসেন্স করার সময় যে সরকারি ফিগুলো নেয়া হয় তা হলো:
- ট্রেড লাইসেন্স ফি;
- সাইন বোর্ড ফি;
- এবং মোট ফি’র উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট।
ট্রেড লাইসেন্সের ফি নির্ভর করে ট্রেড লাইসেন্স এ ব্যবসার ধরন, আয়তন ও অবস্থানের উপর। বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় ফি ভিন্ন হয়ে থাকে। এছাড়া, ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষেত্রে এই ফি তুলনামূলকভাবে আরও কম হয়।
সাধারণত ফি নির্ধারণ করা হয় নিম্নলিখিত বিবেচনায়ঃ
- ব্যবসার ধরন (বাণিজ্যিক, শিল্প, সেবা)
- দোকানের আয়তন ও অবস্থান
- প্রাথমিক আবেদন ও নবায়ন ফি
- অন্যান্য চার্জ (পরিবেশ কর, অগ্নি নিরাপত্তা ফি)
সিটি কর্পোরেশনের জন্য ট্রেড লাইসেন্স ফি – ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ সারাদেশের বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স ফি সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। আপনার ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী সঠিক ফি’র পরিমাণ জানতে দেখুন-
- সিটি কর্পোরেশন ট্রেড লাইসেন্স ফি তালিকা
- পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স ফি’র তালিকা
- ইউনিয়ন পরিষদের লাইসেন্স ফির তালিকা
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ট্রেড লাইসেন্স ফি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ট্রেড লাইসেন্স ফি’র পরিমাণ একই। ট্রেড লাইসেন্স ফি সম্পূর্ণভাবে ট্রেড লাইসেন্স গেজেট অনুসারেই নির্ধারিত।
ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের নিয়ম
ট্রেড লাইসেন্স সাধারণত এক বছরের জন্য বৈধ থাকে। মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে তা নবায়ন করতে হবে। নবায়ন প্রক্রিয়া নিম্নরূপঃ
- নবায়ন ফরম পূরণ করুন: সংশ্লিষ্ট অফিস বা অনলাইনে নবায়নের জন্য আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিন: আগের বছরের লাইসেন্স কপি, ফি পরিশোধের রিসিট, ব্যবসার আয়তনের তথ্য ইত্যাদি জমা দিতে হবে।
- নবায়ন ফি প্রদান করুন: নির্ধারিত নবায়ন ফি পরিশোধ করতে হবে।
- নবায়ন স্ট্যাটাস চেক করুন: ফি পরিশোধের পর নবায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে লাইসেন্স কপি সংগ্রহ করতে হবে।
লাইসেন্স বাতিল ও পুনরায় চালু করার নিয়ম
কিছু পরিস্থিতিতে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল বা স্থগিত করা হতে পারে। যেমন, ব্যবসা বন্ধ করা হলে, নবায়ন না করলে বা অনৈতিক কার্যক্রমে যুক্ত থাকলে।
বাতিল হওয়া লাইসেন্স পুনরায় চালু করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে। পূর্ববর্তী লাইসেন্স নম্বর, আবেদন ফরম ও ফি প্রদান করে পুনরায় চালু করা যাবে।
ট্রেড লাইসেন্স না থাকলে কী হবে?
ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা করা আইনত দণ্ডনীয়। কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যদি লাইসেন্স ছাড়া পরিচালিত হয়, তাহলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:
জরিমানা আরোপ: ট্রেড লাইসেন্স না থাকলে বা মেয়াদ উত্তীর্ণ লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা চালালে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়। জরিমানার পরিমাণ নির্ধারিত হয় ব্যবসার আকার, লোকেশন এবং অপরাধের ধরণ অনুযায়ী।
ব্যবসার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া: লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানকে কর্তৃপক্ষ সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে পারে। এতে প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ বন্ধ হতে পারে এবং মালিক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।
আইনি প্রক্রিয়া: দীর্ঘদিন ধরে ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা করলে স্থানীয় প্রশাসন মামলা করতে পারে। আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবসার মালিককে কারাদণ্ড বা আরও বড় জরিমানা গুনতে হতে পারে।
সরকারি সুবিধা হারানো: ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্যাংক ঋণ, সরকারি তহবিল বা আর্থিক সহায়তা পাবে না।
ট্রেড লাইসেন্সের জন্য জরিমানার নিয়ম
ট্রেড লাইসেন্স না থাকার কারণে বিভিন্ন ধরনের জরিমানা আরোপিত হতে পারে। জরিমানার নিয়ম ও পরিমাণ নির্ভর করে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন অনুযায়ী।
১. ফি পরিশোধে বিলম্ব
যদি লাইসেন্স নবায়নের জন্য নির্ধারিত ফি নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ না করা হয়, তবে অতিরিক্ত জরিমানা আরোপিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, নির্ধারিত সময়ের পর প্রতি মাসে ৫% হারে জরিমানা ধার্য হতে পারে।
২. লাইসেন্স নবায়ন না করা
লাইসেন্স নবায়ন না করলে প্রতিষ্ঠানটিকে অতিরিক্ত জরিমানা গুনতে হতে পারে। নবায়নের মেয়াদ পার হলে প্রতিদিন বা মাসিক ভিত্তিতে জরিমানা ধার্য করা হয়।
৩. অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা
ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করলে মোটা অঙ্কের জরিমানা আরোপিত হতে পারে। এটি এককালীন হতে পারে অথবা নিয়মিত ভিত্তিতে ধার্য হতে পারে।
৪. লাইসেন্স তথ্য গোপন করা
যদি লাইসেন্সের তথ্য পরিবর্তন করা হয় বা গোপন করা হয়, তবে সেটির জন্যও আলাদা জরিমানা ধার্য হতে পারে।
অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স যাচাই করার নিয়ম
বর্তমানে বেশিরভাগ সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স যাচাই করা যায়। ট্রেড লাইসেন্স ব্যবসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের একটি পরিচয় দেয়। কোন ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স নম্বর দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স যাচাই করতে পারবেন।
অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স চেক করার জন্য,
- সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।
- ওয়েবসাইটের “ট্রেড লাইসেন্স ভেরিফিকেশন” বা “লাইসেন্স চেক” সেকশনে যান।
- ট্রেড লাইসেন্স নম্বরটি লিখুন এবং ক্যাপচা কোড দিন।
- ভেরিফাই বাটনে ক্লিক করলে লাইসেন্সের সমস্ত তথ্য স্ক্রিনে প্রদর্শিত হবে।
ট্রেড লাইসেন্স নম্বর কী?
- ট্রেড লাইসেন্স নম্বরটি সাধারণত একটি ইউনিক নম্বর যা লাইসেন্সের আবেদন ও অনুমোদনের সময় প্রদান করা হয়।
- এই নম্বরটি প্রতিটি লাইসেন্সের জন্য আলাদা এবং এটি ব্যবসার পরিচয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
লাইসেন্স নম্বর কোথায় পাওয়া যাবে?
- লাইসেন্সের শিরোনামে বা ডান দিকের উপরের কোণে সাধারণত নম্বরটি উল্লেখিত থাকে।
- অনলাইনে আবেদন করলে আবেদন ফরমের কপি বা প্রাপ্তিস্বীকারপত্রেও এটি উল্লেখ থাকে।
FAQs
শেষ কথা
ট্রেড লাইসেন্স ব্যবসার বৈধতা ও সুরক্ষার জন্য অপরিহার্য। এটি শুধুমাত্র ব্যবসার পরিচয়পত্রই নয়, বরং একটি নিয়ন্ত্রক দলিল যা সরকারের রাজস্ব আদায়েও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে লাইসেন্স প্রাপ্তি, নবায়ন এবং যাচাই করলে যে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে। সঠিক কাগজপত্র ও ফি প্রদান করে দ্রুত ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করা সম্ভব।