ব্যাংক ঋণ নেয়ার আগে আপনার যা জানা উচিত

ব্যাংক ঋণের বিভিন্ন শর্ত, মেয়াদ সব ব্যাংকের এক নয়। তাই ঋণ নেয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনার অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত।

Advertisement

আয়কম ও ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে আমরা অনেকেই ব্যক্তিগত সঞ্চয় দুরে থাক প্রয়োজনীয় খরচ ও সামাল দিতে পারি না। তাই বিভিন্ন সময় আমাদের প্রয়োজন হয় Bank Loan এর।

আমাদের দেশের সব ব্যাংকই ব্যক্তিগত ঋণ দিয়ে থাকে। কিন্তু ঋণের বিভিন্ন শর্ত, মেয়াদ সব ব্যাংকের এক নয়। তাই ঋণ নেয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনার অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত।

হতে পারে আপনি আপনার আসন্ন বিবাহ অনুষ্ঠানের জন্য, কোন আসবাবপত্র ক্রয় বা কোন গ্যাজেট কেনা, বিদেশ যাওয়া বা জরুরী চিকিৎসার প্রয়োজনে ঋণ নিতে পারেন।

Advertisement

বাংলাদেশে একটি ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়াটি খুবই জটিল ও হয়রানিমূলক ছিল। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংকিং কার্যক্রম ডিজিটাল হওয়ার কারণে ঋণ পাওয়া অনেকটা সহজ হয়েছে। এমনকি কিছু ব্যাংক ঋণ নেওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদনও নিচ্ছে।

তবে ব্যাংক ঋণ নিয়ে সময়মত পরিশোধ না করলে পড়তে পারেন ঝামেলায়। দেখুন- ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার শাস্তি

মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে জেনে নেয়া যাক ব্যাক্তিগত ঋণ বা Personal Loan কি।

Advertisement

Personal Loan বা ব্যক্তিগত ঋণ কি?

ব্যক্তিগত ঋণ হল একধরণের স্বল্পমেয়াদী ও অনিরাপদ লোন যা কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোন আইনগত উদ্দেশ্যে একজন গ্রাহককে দিয়ে থাকে।

এখানে অনিরাপদ ঋণ বলার অর্থ হচ্ছে, এ ঋণের জন্য ব্যাংক কোন জামানত চাইবে না। সাধারণত Personal Loan বা ব্যক্তিগত ঋণগুলোর মেয়াদ ১ বছর থেকে ৫ বছর মেয়াদী হয়ে থাকে।

এ ধরণের ব্যক্তিগত ঋণগুলো কখনো কখনো আমাদের অনেক উপকারে লাগে।

Advertisement

ব্যক্তিগত ঋণের সুবিধা

ঋণ নেয়া সবসময় একটি ঝামেলাপূর্ণ কাজ যদি এটি কোন বন্ধকী ঋণ বা Mortgage Loan না হয়। যাই হোক আপনার যদি সত্যিই একটি লোন দরকার, ব্যক্তিগত ঋণের সুবিধাগুলো জেনে রাখুন।

ব্যক্তিগত ঋণের ক্ষেত্রে একজন গ্রাহক নিম্মোক্ত সুবিধাগুলো পাবেন।

  1. সংক্ষিপ্ত প্রক্রিয়াকরণের সময়: ব্যবসায়িক ঋণের বিপরীতে ব্যক্তিগত ঋণ প্রক্রিয়াকরণের সময় তুলনামূলকভাবে কম।
  2. ঋণের পরিমাণ: যদিও এটি একটি ব্যক্তিগত ঋণ, আপনার আয় এবং ক্রেডিট যোগ্যতার উপর নির্ভর করে আপনি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে 20.00 লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন।
  3. প্রতিযোগিতামূলক সুদের হার: বর্তমানে অনেক ব্যাঙ্ক ব্যক্তিগত ঋণ প্রদান করছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের বেধে দেওয়া সুদের হার 9.00%, বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতিযোগিতামূলক সুদের হারে আপনি 7.00% p.a থেকে 9.00% p.a হারে ঋণ পেতে পারেন
  4. ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা: ব্যক্তিগত ঋণের যোগ্যতা এত কঠিন নয়। এটা খুব সহজ এবং অল্প কিছু সাধারণ কাগজপত্র দিয়েই এ ঋণ পেতে পারেন।
  5. জামানত মুক্ত: ব্যক্তিগত ঋণের জন্য কোন ব্যাংক কোন ধরণের জামানত জামানত চাইবে না। এটি ব্যক্তিগত ঋণের একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা।

কিভাবে ব্যক্তিগত ঋণের জন্য আবেদন করবেন

আমি আগেই বলেছি ব্যক্তিগত ঋণের আবেদন পদ্ধতি বেশ সহজ। Personal Loan বা ব্যক্তিগত ঋণ পাওয়ার ধাপগুলো বর্ণনা করছি।

ধাপ ১ঃ তথ্য সংগ্রহ করুন

এই পর্যায়ে আপনাকে একটি উপযুক্ত ব্যক্তিগত ঋণ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য ও শর্তাবলী সংগ্রহ করতে হবে। এজন্য আপনি বিভিন্ন ব্যাংকের ওয়েবসাইট দেখতে পারেন।

Advertisement

এছাড়া আপনার কাছাকাছি স্থানীয় ব্যাংকগুলোতে যোগাযোগ করে এসব তথ্য জানুন। এসব তথ্যের মধ্যে Interest Rate এবং Loan Processing ফি অবশ্যই আপনার বিবেচনা করতে হবে।

সুদের হার, লোন প্রসেসিং ফি ও অন্যান্য শর্ত বিবেচনা করে দেখুন কোন ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া উচিত।

ধাপ-২ঃ আপনার ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা যাচাই করুন

সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করার পরে এখন আপনি জানেন যে ব্যাংকগুলো কি চায়। সে অনুসারে আপনি সহজেই যাচাই করতে পারবেন কোন ব্যাংক আপনাকে ঋণ দিবে আর কোন ব্যাংক দিবে না।

ধাপ-৩ঃ কাগজপত্র প্রস্তুত করুন

আপনি যদি ব্যক্তিগত ঋণের জন্য আবেদন করতে চান তাহলে আপনার নিম্নলিখিত নথি থাকতে হবে:-

  • জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
  • টিআইএন
  • 3 কপি সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • গত ছয় মাসের ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট
  • চাকরিজীবির ক্ষেত্রে কর্মচারী পরিচয়পত্র/পরিচয়ের পত্র/বেতনের শংসাপত্র/পে স্লিপ ইত্যাদি
  • ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স
  • ১/২ জন স্বনামধন্য ও আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তির ব্যক্তিগত নিশ্চয়তাপত্র
  • ব্যাঙ্কের প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্র

ধাপ-৪ঃ ঋণ সংগ্রহ করুন

ব্যাংক আপনার কাগজপত্র ও অন্যান্য তথ্য যাচাই করে যদি সন্তুষ্ট হয়, আপনার ঋণের আবেদন অনুমোদন করতে পারে। যদি ব্যাংক আপনাকে লোন প্রদান করে সেক্ষেত্রে আপনার থেকে আরো কিছু ডকুমেন্ট চাইবে, ঋণের পরিমাণ অনুযায়ী স্ট্যাম্পে চুক্তি নামা করতে হবে, আপনার চেক বইয়ের পাতা, সকল কাগজপত্রের ফটোকপি ইত্যাদি।

ভবিষ্যতের প্রয়োজনে আপনি অবশ্যই সকল কাগজপত্রের এক সেট নিজের কাছে রাখতে ভুলবেন না।

শেষকথা

বিভিন্ন ব্যাংকে ব্যক্তিগত ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে মূলত নিয়ম এগুলোই। তাছাড়া প্রতিটি ব্যাংকই ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে নিজস্ব ও নির্দিষ্ট মানদন্ড বিবেচনা করে থাকে।

এখানে মূলত ব্যক্তিগত ঋণের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো। যদি আপনি কখনো ব্যক্তিগত ঋণের জন্য আবেদন করতে চান এসব তথ্য কিছুটা হলেও আপনাকে আইডিয়া দিবে।

এজন্য অবশ্য আপনি আগে ব্যাংকে যোগাযোগ করে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। বিভিন্ন ব্যাংকের Personal Loan নিয়ে জানতে নিচের ব্যাংকগুলোর ওয়েবসাইটে দেখতে পারেন।

ডাচ বাংলা ব্যাংক লোন
সিটি ব্যাংক লোন
স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক লোন
ব্র্যাক ব্যাংক লোন
মধুমতি ব্যাংক লোন
প্রাইম ব্যাংক লোন
ইস্টার্ন ব্যাংক লোন
মার্কেন্টাইল ব্যাংক লোন

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *